পায়রা বন্দরের ড্রেজিংয়ের ব্যয় ৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকা

পিবিএ,ঢাকা: পায়রা বন্দরের জেটির গভীরতা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১০ মিটার। এ গভীরতায় বন্দরের ড্রেজিংয়ের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৩ ইউরো বা প্রায় ৮ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এ গভীরতা নিশ্চিত করা গেলে জোয়ারের সময় ১২ মিটার ড্রাফটের (গভীরতার) জাহাজও বন্দরের জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারবে বলে জানা গেছে।

পায়রা বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার পাশাপাশি এটিকে অধিক ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করে তোলার জন্য গতকাল একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তি সই হয়। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেডের স্বাক্ষরিত চুক্তিটির আওতায় রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রসঙ্গত, পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড মূলত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের জেটি খনন ও এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেলজিয়ামভিত্তিক জান ডে নুল ড্রেজিং কোম্পানির গড়ে তোলা একটি প্রতিষ্ঠান।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এম জাহাঙ্গীর আলম এবং জান ডে নুল ড্রেজিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ডেভিড জোকার এ চুক্তিপত্রে সই করেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির সিইও সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ বছর মেয়াদি এ চুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলকে (টার্নিং বেসিনসহ) সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের ৪০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বাল্ক ক্যারিয়ার চলাচলে সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হবে। এর মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ ও সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ মিটার গভীরতা-সংবলিত একটি চ্যানেল তৈরি করা হবে। চুক্তিতে প্রকৌশল সমীক্ষাসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করার সময়কাল বেঁধে দেয়া হয়েছে ২৮ মাস। এরপর প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে আরো ছয় মাস। চুক্তির মেয়াদকালের বাকি ৯ বছর ২ মাস সময় নির্ধারিত রাখা হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের জন্য।

প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৩ ইউরো। বেলজিয়াম এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির সহায়তায় এ অর্থ এইচএসবিসি ব্যাংক ও এর কনসোর্টিয়াম ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড। অন্যদিকে প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং শেষ হওয়ার ছয় মাস পর থেকে এ অর্থ ২০টি সমপরিমাণ অর্ধবার্ষিক কিস্তিতে সুদসহ পরিশোধ করবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জোয়ারের সহায়তায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারবে। এছাড়া দেশের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য বছরে দুই কোটি টন কয়লা বন্দরের পোতাশ্রয়ে সরাসরি খালাস করা যাবে। ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের তিন হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ ও ৪০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বাল্কবাহী জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারবে সরাসরি।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দর অবকাঠামোসহ অন্যান্য কম্পোনেন্ট, কনটেইনার, বাল্ক ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে আগ্রহী দেশ ও প্রতিষ্ঠান পায়রা বন্দরে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্দরকেন্দ্রিক শিল্প অবকাঠামো গড়ে ওঠার পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে মন্ত্রণালয়।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...