পিবিএ,ঢাকা: ১২ বছরের পুরনো ক্যাজুয়াল (নৈমিত্তিক) কর্মীদের তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এই ক্যাটাগরিতে প্রায় ২৫০ জন কর্মী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাগের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তবে প্রথম পর্যায়ে ৪৩ জন ক্যাজুয়াল কর্মচারীর হাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হয়।পর্যায়ক্রমে বাকিরাও এ সুবিধা পাবেন। সোমবার (৩ জুন) দুপুরে বিমানের প্রধান কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল ৪৩ জনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।
উল্লেখ্য, বিমানে প্রায় দুই হাজার ৬০০ ক্যাজুয়াল কর্মী রয়েছেন যার মধ্যে প্রায় ২৫০ জন ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাজুয়াল শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, তিন বছরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আগে বিমান মেডিক্যাল সেন্টারে মেডিক্যাল ফিটনেস ও নিরাপত্তা বিভাগের ছাড়পত্র পেতে হবে।
প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের শিক্ষানবিশসহ তিন বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিন বছর পরেও বিমান এ চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা স্থায়ীভাবে চাকরির জন্য কোনও আবেদন করতে পারবেন না।
সূত্র জানায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা দুটি উৎসব ভাতা ও মূল বেতনের ২০ শতাংশ নববর্ষ ভাতা পাবেন। বিমানের স্থায়ী কর্মীদের মতো মেডিক্যাল, বীমা ও শিক্ষা বৃত্তি পাবেন। এছাড়া বছরে ১৪ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১৪ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি, ৩০ দিন বিশেষাধিকার ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। তিন বছরের নিয়োগপ্রাপ্তরা গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধাও পাবেন।
অনুষ্ঠানে বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন ছিল দীর্ঘদিনের। তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে রূপান্তরিতরাও এখন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কর্মীরা নিয়ম মেনে যা কিছু চাইবেন তাই আমরা দিতে রাজি আছি। তবে সব কিছুই পূরণ হবে বিমানকে লাভজনক অবস্থানে রাখার মধ্য দিয়ে। কেবিন ক্রুদের মধ্যেও অনেকে ক্যাজুয়াল কর্মী আছেন তারাও এ সুবিধা পাবেন। কেবিন ক্রুদের বিষয়ে মামলা আছে, আইনগত সমস্যার সমাধান হলে এটিও দ্রুত সমাধান হবে।’
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা বিবেচনা করে দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষভাবে অবদান রাখার জন্য কর্মীদের প্রযোজ্যক্ষেত্রে প্রণোদনাসহ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে যারা খারাপ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
বিমানের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট) মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মীরা যদি সুন্দর জীবনযাপন করতে না পারেন তবে প্রতিষ্ঠানও ভালো থাকে না। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মীদের ভালো জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি পেলো। কর্মীদের আরও বেশি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন বিমানের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (গ্রাহক সেবা) আতিক সোবহান।
অনুষ্ঠানে বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে এক যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছিলাম। আজ এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ দাবি বাস্তবায়ন হলো। ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের অনেকে বিমানে কাজ করার পাশাপাশি অন্য কাজ করতে বাধ্য হতেন। এমনি কেউ কেউ রিকশাও চালিয়েছেন, যা বিমানের ভাতমূর্তির সঙ্গে মানানসই নয়। কর্মস্থলে আহত হলে কোনও ধরনের চিকিৎসা খরচ পেতেন না।’
অনুষ্ঠানে বিমানের পরিচালক (প্রকৌশল) খন্দকার সাজ্জাদুর রহিম, মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ, ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাছমিন আকতার, বিমান শ্রমিক লীগের সম্পাদক মো. হারুন-উর-রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পিবিএ/এএইচ