পিবিএ, ঢাকা : এবার যেকোনো মূল্যে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। ডিএসসিসি গঠিত ১১ সদস্যের একটি কমিটি আজ শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়।
পরিদর্শন শেষে কমিটির প্রধান ও ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সকাল ৯টার পর ক্ষতিগ্রস্থ ভবনগুলো পরিদর্শনে এসেছি। আগুনে পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভবন প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মনে হয়েছে।’
আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনের অনুমতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনার পর নতুন করে আর কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়র (সাঈদ খোকন) বলেছেন, যেকোনো মূল্যে সবাই মিলে এসব এলাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হবে।’ এতোদিন সরানো হয়নি কেন জানতে চাইলে এ প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এবার যেকোনো মূল্যে সেসব (কেমিক্যাল গোডাউন) সরিয়ে নেওয়া হবে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী (পুর কৌশল বিভাগ) জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হওয়া ওয়াহিদ ম্যানশনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও দ্বিতীয় তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিম ও কলামগুলো বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বিম ও কলাম তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। তবে কতোটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এক সপ্তাহ পর জানা যাবে, ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী কিনা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন প্রফেসর ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী (পুর কৌশল বিভাগ-বুয়েট), প্রফেসর ড. ইশতিয়াক আহমেদ (পুর কৌশল বিভাগ-বুয়েট), লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান (পরিচালক-ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স), মো. আসাদুজ্জামান (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী-ডিএসসিসি), মো. জাফর আহম্মেদ (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী-ডিএসসিসি), মো. সিরাজুল ইসলাম (প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ-ডিএসসিসি), মো. নুরুল ইসলাম (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-রাজউক), মো. শাহ আলম (পরিচালক-রাজউক), মো. নুরুজ্জামান জহির (অথরাইজড অফিসার-রাজউক) ও সদস্য সচিব মুন্সী মো. আবুল হাসেম (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-ডিএসসিসি)।
অন্যদিকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউকের)অনুমোদিত কিনা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কমিটির আরেক সদস্য রাজউকের অথরাইজড অফিসার মো. নুরুজ্জামান জহির।
ভবনের সঙ্গে ভবন লাগোয়া থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনাকে (সাংবাদিক) বুঝতে হবে এটা পুরান ঢাকা। এখানে অনেক আগে থেকেই ভবন তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউক অনেকদিন ধরে কাজ করছে। তবে সবার আগে দরকার সচেতনতা।’ এভাবে ভবন নির্মাণের নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির সদস্যদের দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনসহ দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয় সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবে এ কমিটি।
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুরক্ষাসেবা বিভাগ সংশ্লিষ্ট জরুরি কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। কন্ট্রোল রুমটির সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম চলবে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
পিবিএ/জিজি