পিবিএ হেল্থ ডেস্ক: টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী,পাখি সরীসৃপ প্রাণীর শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয় এবং নারীর ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়, যদিও স্বল্প পরিমাণ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকেও ক্ষরিত হয়। টেস্টোস্টেরন একটি অত্যাবশ্যক প্রধান পুরুষ হরমোন যা শুক্রাশয়ের লিডিগ কোষ (খবুফরম ঈবষষ) থেকে উৎপন্ন হয়।
এটি পুরুষের বৈশিষ্ট্যাবলীর উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী। নারীদেরও টেসটোসটেরন রয়েছে, কিন্তু তা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে। পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।
টেসটোসটেরন মাত্রা পুরুষদের সবকিছুকে প্রভাবিত করে। প্রজনন ব্যবস্থা এবং যৌনতা থেকে শুরু করে পেশীর ভর, হাড়ের ঘনত্ব, কণ্ঠস্বর, চুল এবং এমনকি পুরুষদের সুনির্দিষ্ট কিছু আচরণে পর্যন্ত এই প্রভাব বিদ্যমান।
এটি পুরুষের পুরুষত্ব এবং জীবনীশক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুক্রানু উৎপাদন এবং চুলের বৃদ্ধির জন্যও দায়ী।
ভূমিষ্ট হওয়ার অনেক আগ থেকেই, যখন মায়ের গর্ভে তার বয়স মাত্র সাত সপ্তাহ, তখন থেকেই পুরুষ মানুষের শরীরে পুরুষ হরমোনের উৎপাদন শুরু হয়। টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় বয়ঃসন্ধির সময় আর সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে বয়ঃসন্ধির শেষ সময়। তারপর লেভেল বন্ধ থাকে। ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত এই লেভেল স্থিতি পর্যায়ে থাকে। কিন্তুবয়স ত্রিশের কোঠা পার হলেই টেস্টোস্টোরনের মাত্রা প্রাকৃতিকভাবেই প্রতি বছর ১% হারে কমতে থাকে। এছাড়া বড় ধরনের অসুখ-বিসুখ হলেও টেস্টোস্টেরনের লেভেল দ্রুত কমতে থাকে। আর এই ঘাটতির লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ হল যৌনদুর্বলতা, শারীরিক শক্তি-সামর্থ কমে যাওয়া, ঘুমের সংকট এবং রাগ বা বিরক্তি ভাব।
হরমোন সিক্রিয়েশনের ঘাটতি বা অনুপস্থিতি কিংবা গোনাডের (টেস্টিসের) অন্যান্য কর্মকা-ের ব্যাঘাত জনিত অসুস্থতাকে বলা হয় হাইপোগোনাডিজম। একে লো টি বা টেস্টোস্টেরনের স্বল্পতাও বলা হয়। এ অবস্থায় শুধু চলমান যৌন এবং শারীরিক দুর্বলতার জন্যই নয়, ভবিষ্যৎ শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্যও চিকিৎসকগণ এই হরমোনটির ঘাটতি রোধ এবং এর লেভেল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকগণ ঔষধের পাশাপাশি পথ্য হিসেবে খড়ি ঞ কাটিয়ে ওঠার জন্য পুরুষ হরমোন বা টেস্টোস্টেরণ লেভেল বৃদ্ধিকারক কিছু খাদ্য প্রাকৃতিক সম্পূরক (supplement) হিসেবে গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
টেস্টোস্টেরনের লেভেল সন্তোষজনক মাত্রায় থাকা শুধু যৌবন কালের জন্যই নয়, সব সময়ের জন্য; এমনকি বৃদ্ধ বয়সের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ, শরীর গঠন, যৌনক্রিয়া, এবং অন্য সকল শারীরিক কর্মকান্ডের জন্য শরীরে পরিমিত মাত্রায় টেসটোসটেরন হরমোন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
উপরন্তু, আপনার টেস্টোরেনের মাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে দ্রুত মাংসপেশি এবং জীবনীশক্তি লাভের কারণ; যা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো, এটি নারীদের সুস্বাস্থ্য এবং যৌনতার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষকরা বেশ জোরালোভাবেই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরেই পরিমিত মাত্রায় টেস্টোরেন থাকা উচিত। বিশেষ করে ১৩ বছর বয়সে তো এটি অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পিবিএ/মু.আ.হু