পুর্ব পুরুষদের জমিদারি দেখা হলনা শিশু জায়ানের!

শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ সোনিয়া, নাতি জায়ান ও জামাতা মশিউল হক চৌধুরী: ফাইল ছবি

হাবিব সরোয়ার আজাদ,সুনামগঞ্জ: দাদার হাত ধরে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়ায় চৌধুরী পরিবারের জমিদারি দেখা হলনা শ্রীলংকায় বোমা হামলায় নিহত আট বছর বয়সী শিশু জায়ান চৌধুরীর।,
চলতি বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই দাদা মতিনুল হক চৌধুরী (পারুল)’র সাথে প্রথমবারের বারের পৈতৃক নিবাস ও পূর্ব পুরুষের জমিদারি দেখার জন্য সুনামগঞ্জের দিরাই’র ভাটি পাড়ায় আসার কথাও ছিল জায়ানের।,
কিন্তু শ্রীলংকায় বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও মা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া সহ অপর ছোট ভাইয়ের সাথে সম্প্রতি শ্রীলংকায় বেড়াতে গিয়ে রবিবার সকালে সেখানে বোমা হামলায় নিহত হন শিশু জায়ান চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ সেলিমের মেয়ের গর্ভে জন্ম নেয়া নাতী ছোট্র জায়ান চৌধুরী পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়ায় বনেদী জমিদার চৌধুরী পরিবারে।,
প্রিয় নাতীর সাথে নিজের গৌরব ও ঐতিহ্যের জমিদারি নিয়ে গল্প করতেন বোমা হামলায় আহত মশিউল হক চৌধুরীর বাবা মতিনুল হক চৌধুরী পাারুলের। সমুদ্র সাদৃশ্য বিশাল বিশাল হাওর ঘেরা গ্রামের বর্ণণা শুনে দাদার সাথে গ্রামে বাড়ি নিয়ে যাওয়া এবং ঘুরে ঘুরে হাওর আর গ্রামের পর গ্রাম দেখার বায়নাও ছিল দাদুর কাছে।,

পুর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজরিত স্থান ও প্রিয় নাতীর হাত ধরে নিজেদের জমিদারির সীমানা ঘুরে ঘুরে দেখানো, গ্রামে থাকা রক্তের আত্বীয় এবং স্বজনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুপ্ত বাসনাও ছিল দাদুর।
নাতী প্রথমবারের মত গ্রামের বাড়ি আসবে তাই সপ্তাহখানেক আগে দিরাই গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়ায় ছুটে এসেছিলেন দাদা মতিনুল হক চৌধুরী।, বাড়ি এসে শ্রমি লাগিয়ে নতুন করে ছৌধুরী নিবাস সংস্কার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা,বিদ্যুত সংযোগ, রাস্তাঘাট মেরামতদের কাজ শুরু করেন। বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন ফ্রিজ-বিদ্যুত ভোগান্তির শংকায় নতুন জেনারেটর সহ মুল্যবান আসবাবপত্র।,
কিন্তু নাতীকে নিজেদের জমিদারি দেখানোর সূপ্ত বাসনা অধরাই রয়ে গেল রোববারের বোমা হামলায় জায়ান চৌধুরী নিহত হওয়ার মধ্যদিয়ে। বোমা হামলায় হতাহতের খবর পেয়ে রোববার সন্ধায় অশ্রুসজল নয়নে গ্রামের বাড়ি দিরাই’র ভাটিপাড়ায় চৌধুরী নিবাস ছেড়ে মতিনুল হক ঢাকার বাসায় ছুটে যান। নাতীর মৃত্যুর খবর শুনে বার বার মুর্চা যাচ্ছিলেন তিনি।

মতিনুল হক চৌধুরীর ভাতিজা সুজাত বখত চৌধুরী সোমবার রাতে বলেন, সম্পর্কে উনি আমার চাচা হলেও আমরা ছিলাম সমবয়সী । তিনি (মতিনুল হক) ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি দিরাই আসার সময় আমাকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন। গল্প করেছেন উনার নাতী আমার চাচাত ভাই আদরের জায়ান চৌধুরী গ্রামের বাড়ি আসবে আগামী নভেম্বরে। তাই গ্রামের বাড়ি নতুন করে সাজানো, সংস্কার কাজে তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের সাথে থেকে তদারকি করেন।

তিনি আরো বলে, রবিবার বিকেলে আমি ও চাচা এক সাথেই ছিলাম, হঠাৎ করেই নাতী ও ছেলের শ্রীলংকায় দুর্ঘটনার খবরে পরপর দুঠো মুঠোফোনে কল আসে। হাসোজ্জল মানুষটির মুখ হঠাৎ মলিন হয়ে মুষড়ে পড়েন, তরিগড়ি করেই ঢাকায় বাসায় ফিরেন। ঢাকার বাসায় পৌছলেও সেখানেও তিনি প্রিয় নাতরি জন্য বিলাপ করে বার বার সোমবার মুর্চা গেছেন।,

প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কায় বর্বরোচিত সিরিজ বোমা হামলায় নিহত শেখ সেলিমের নাতী ছোট্র জায়ান চৌধুরী (৮)র পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জের বনেদী জমিদার পরিবারে।,

রবিবার ইষ্টার সানডে পালনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর কয়েকটি গীর্জা ও হোটেল সহ আট স্থানে সিরিজ বোমা হামলায় ২৯০ জনের মত লোক নিহত হন। লোকজনের হতাহতের ঘটনার পর দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের বরাতে এক শিশুসহ দুজন বাংলাদেশি নাগরিকের প্রথমে নিখোঁজ থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
পরে রোববার (২১ এপ্রিল) রাতে তাদের খোঁজ মেলে। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়ার স্বামী মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও তার জেষ্ঠ্য নাতি জায়ান চৌধুরী।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করার পর শ্রীলংকার কলম্বোর একটি হাসপাতালে নেয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এর মধ্যে শিশু জায়ানের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। অবশেষে শিশু জায়ান চৌধুরী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স তারও পা দু’টি ড্যামেজ হয়ে গেছে।
এদিকে শেখ সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারি ইমরুল হক গণমাধ্যকে জানান , গুরুতর আহত পিতা-পুত্র শ্রীলঙ্কায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে সেখানেই জায়ানের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, বুধবার বাবাকে ছাড়াই দেশে আনা হচ্ছে শিশু জায়ানের মরদেহ। শেখ সেলিমের জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সের পায়ের জখম গুরুতর হওয়ায় তাকে এখনই দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

সোমবার সকালে নিহত জায়ানের বাসায় তার স্বজনদের সহমর্মিতা জানানো শেষে এ কথা জানান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ। রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা এবং তিনটি হোটেলসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ২৯০ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিহতের স্বজনরা জানান, কয়েকদিন আগে শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া, তার স্বামী মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও দুই ছেলে জায়ান এবং জোহানকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে যান। তারা কলম্বোর পাঁচ তারকা হোটেল সাংগ্রি-লায় অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী সোনিয়া ও ছোট ছেলে জোহানকে হোটেল রুমে রেখে রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে বড় ছেলে জায়ানকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলের নিচ তলায় রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে যান মশিউল হক। ঠিক তখন হোটেলে নিচতলাসহ শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানায় শেখ সেলিমের পরিবার। হামলায় মশিউল হক চৌধুরী গুরুতর আহত হলেও মারা যান তার ছেলে জায়ান চৌধুরী। তবে হোটেল রুমে থাকা সোনিয়া ও ছোট ছেলে জোহানের কোন ক্ষতি হয়নি। খবর পাওয়ার পর রোববার বাংলাদেশ থেকে পরিবারের কয়েকজন সদস্য কলম্বোয় গেছেন।

রোববার সকালে ইষ্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে সেখানকার কয়েকটি গীর্জা, হোটেল সহ আটটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।, হোটেল শাংরি-লার রেস্তোরায় সকালে নাস্তা খাবারের সময় ভিড়ের মধ্যে বোমা হামলা ঘটলে অন্যদের সাথে শেখ সেলিমের জামাতা ও নাতী প্রথমে আহত হলেও পরে নাতী জায়ান চৌধুরী মৃত্যু বরণ করেন।

পিবিএ/হক

আরও পড়ুন...