বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) সূচনালগ্ন থেকেই অত্যন্ত সুনাম,দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে খুন,ডাকাতি সহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধের মূল রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী গ্রেফতারের মাধ্যমে অপরাধ নির্মূল ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ গত ০৭/০৯/২০২০ খ্রিঃ তারিখ সকাল সাড়ে ৮টায় সাভারের আমিনবাজারের নিকট পুলিশ পরিচয়ে সংঘটিত স্বর্ণ লুটের সঙ্গে জড়িত ডাকাত চক্রের ০৮(আট)জন সদস্যকে গ্রেফতার করে ও ডাকাতির ২২ ভরি স্বর্ণ, স্বর্ণ বিক্রির ৫ লক্ষ টাকা, লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মটর সাইকেল জব্দ করে ।
ঢাকার তাতীবাজারস্থ সোনালী গোল্ড হাউজ নামক স্বর্ণের দোকানের মালিক জনৈক অর্জুন হালদার (৪৮), পিতা-মৃত সেবক চন্দ্র হালদার, সাং-বাউলীকান্দা, থানা-শিবালয়, জেলা-মানিকগঞ্জ তার পুরাতন কারিকর সুরেশ হালদার(৪৮),পিতা-সতীশ হালদার,সাং-আটিপাড়া,থানা-কেরানীগঞ্জ জেলা ঢাকাকে সঙ্গে নিয়ে গত ০৭/০৯/২০২০খ্রিঃ তারিখে রাজবাড়ি জেলার পলাশ জুয়েলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ ও রাজলক্ষী জুয়েলার্সের মালিক জয়দেবদ্বয়কে স্বর্ণ সরবরাহের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঐদিন অনুমান ০৬:০০ ঘটিকায় একটি কালো রংয়ের ট্রাভেল ব্যাগে স্বর্ণের চেইন,কানের দুল, বল চেইন,কানপাশা সহ সর্বমোট ১৬৬.৫৫৩ (একশত ছিষট্টি দশমিক পাঁচশত তিপান্ন) ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার যার সর্বমোট মুল্য অনুমান ১,১৪,৯২,১৫৭ (এক কোটি চৌদ্দ লক্ষ বিরানব্বই হাজার একশত সাতান্ন) টাকা সহ অর্জুন হালদার তার তাতী বাজারে অবস্থিত বাসা থেকে রাজবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাহির হয়। অর্জুন হালদারের বাসার সামনে আগে থেকেই অপেক্ষারত সুরেশ হালদারকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেটে তাতী বাজার মোড়ে আসেন। সেখান থেকে সাভার পরিবহণ বাসে রওনা দিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে নামেন।
গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস পরিবর্তন করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার ও তার সাবেক কারিকর সুরেশ হালদার রাজবাড়ি পরিবহনে উঠেন। একই তারিখ সকাল অনুমান ০৮:৩০ ঘটিকায় বাসটি সাভার থানাধীন আমিনবাজার অতিক্রম করে বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্ল্যান্টের সামনে ফাঁকা জায়গায় পৌছলে ০৪(চার)টি মটর সাইকেলে ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা মাস্ক পরিহিত ডাকাত বাসটির গতিরোধ করে বাসটি থামিয়ে বাসে উঠে। তারা তাদেরকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে উক্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার ও তার সঙ্গে থাকা সুরেশ হালদারকে টানা হেচড়া করে বাস থেকে নামিয়ে তাদের দুজনকে আলাদা আলাদা মটর সাইকেলে উঠিয়ে গাবতলীর দিকে রওনা হয়। অনুমান ২০০ গজ যাওয়ার পর মটর সাইকেল থামিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদারকে নাকে মুখে কিল ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করে তার হাতে থাকা স্বর্ণ সহ ব্যাগটি এবং নকিয়া মোবাইল ফোন মডেল নং-২১৬ নিয়ে দ্রুতবেগে গাবতলীর দিকে মটর সাইকেল চালিয়ে চলে যায়। ডাকাতদের বয়স অনুমান ২০-৪৫ বৎসর হবে।
উক্ত ঘটনায় বাদী অর্জুন হালদার গত ১৮/১১/২০২০ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ১৭৬/২০(সাভার)। বিজ্ঞ আদালত উক্ত সিআর মামলটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই ঢাকা জেলাকে নির্দেশ দেন। উক্ত সিআর মামলাটির অনুসন্ধানকালে ঘটনাটি একটি ডাকাতির ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বাদী অর্জুন হালদারকে সাভার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বাদী অর্জুন হালদার সাভার মডেল থানার মামলা নং-২৮ তারিখ-১৩/০১/২০২১, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড দায়ের করেন। পিবিআই ঢাকা জেলা গত ১৩/০১/২০২১ তারিখে স্ব-উদ্দোগে মামলাটির তদন্তভার অধিগ্রহণ করে এবং উক্ত ইউনিটে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ রাশিদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ রাশিদুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারেন যে, এ ঘটনাটি úুলিশ পরিচয়ে একটি আন্তঃজেলা স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনা। বনজ কুমার মজুমদার এর বিচক্ষণমুলক নির্দেশনায় মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পুলিশ সুপার পিবিআই ঢাকা জেলার নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ রাশিদুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ সালাউদ্দিন সহ একটি চৌকস টীম অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মামলাটির তদন্তে মাঠে নামেন।
শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতায় এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গত ১৪/০১/২০২১ তারিখে পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ডাকাত চক্রের সদস্য (১) সুরেশ চন্দ্র হালদার (৪৮ ২) মিঠুন মজুমদার মিঠু (৩৩), ৩) উজ্জল চন্দ্র দাস (৩২), ৪) মিহির দাস (৩২) ডাকাদেরকে গ্রেফতার করে। তারা প্রত্যেকে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামী সুরেশ হালদ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সে পুলিশ পরিচয়ে সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা স্বর্ণডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য। সে ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য রাজবাড়ি যাওয়ার তথ্য তার সহযোগি ডাকাতদেরকে আগেই পাচার করে। তার পাচার করা তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতদল গত ০৭/০৯/২০২০ খ্রিঃ ভোরে ৩/৪টি মটর সাইকেল সহ তাতীবাজারে অর্জুন হালদারের বাসার পাশে সতর্কতার সাথে অপেক্ষা করতে থাকে। অর্জুন হালদার বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মোঃ সোহেল আহম্মেদ পল্লব (৪৫), ঢাকা এর নেতৃত্বে সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেন (৪০), শংকর চন্দ্র ঘোষ (৪৫), মিঠুন চৌকিদার(৩০) ঢাকা সহ ডাকাতদলটি তাকে অনুসরণ করতে থাকে। বাদী অর্জুন হালদার ও সুরেশ গাবতলী থেকে রাজবাড়ি পরিবহণে যাত্রা করে আমিন বাজার পার হওয়ার সাথে সাথেই অনুমান ০৮:৩০ ঘটিকায় ডাকাতদলটি পুলিশ পরিচয়ে বাসটির গতিরোধ করে। বাসে উঠে তারা অর্জুন হালদার ও সুরেশকে বাস থেকে টানা হেচড়া করে নামিয়ে নেয়।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের দেয়া তথ্য মতে নিরলস ও বিরতিহীণ অভিযান পরিচালনা করে আসামী শংকরের নিকট হতে বাদীর লুন্ঠিত স্বর্ণালংকারের মধ্যে ২২ ভরি স্বর্ণ, আসামী মোঃ সোহেল আহম্মেদ পল্লব এর নিকট থেকে লুন্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির ৫,০০,০০০(পাঁচ লক্ষ) টাকা, আসামী মিঠুন চৌকিদারের নিকট থেকে বাদীর লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে এবং আসামী সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেন এর নিকট থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হিরো হোন্ড মটর সাইকেল যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ল-২৩-০৩০৭ জব্দ করা হয়েছে।
পিবিএ/এমএসএম