পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণ খোঁজতে ৩৭ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ

৩৭ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ

পিবিএ, ঢাকা : পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণ ও তার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য আরও ৩৭ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বাংলাবান্ধা, বেনাপোল, ভোমরা, হিলি, সোনা মসজিদ, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টম হাউজ দিয়ে চলতি বছরের আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬৭ হাজার ৮০৬ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সংস্থাটি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মহাপরিচালক (ডিজি) ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ী একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে আমরা মূলত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এখনই কারো নাম উল্লেখ করার মতো সময় হয়নি। তবে দোষী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে ৩৩২ পেঁয়াজ আমদানিকারকদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে শুল্ক গোয়েন্দা। গত ২৫ নভেম্বর ১০ পেঁয়াজ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করে সংস্থাটি। জিজ্ঞাসাবাদে আমদানিকারকরা দাবি করেন, বন্দর থেকেই সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন, তাদের কাছে কোনো মজুত নেই।

সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৪১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশের আটটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে এক লাখ ৬৭ হাজার ৮০৬ টন। এতে খরচ হয় ৬৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসে ৫১ হাজার ৬৪৯ টন। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৪৬ হাজার ৩৭০ টন, টেকনাফ দিয়ে ৩৪ হাজার ৮৬১ টন, হিলি দিয়ে ২৪ হাজার ৩০৮ টন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে ছয় হাজার ৬৯৩ টন, বাংলাবান্ধা দিয়ে ১৭১ টন ও ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে আসে ২৭ টন পেঁয়াজ।

কারসাজির সন্দেহে মোট ৩৪১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব আমদানিকারক এক হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ এনেছে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
এদিকে, সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজারের টিএম এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানটি ৯ হাজার ২০ টন পেঁয়াজ আনে ৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এরপর বেশি আনে একই জেলার ডাকবাংলা রোডের দীপা এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠান ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় আনে পাঁচ হাজার ৬৯৩ টন।

বাংলাবান্ধা, বেনাপোল, ভোমরা, হিলি, সোনা মসজিদ, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টম হাউজ দিয়ে চলতি বছরের আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৬৭ হাজার ৮০৬ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন। তারপরও অতিরিক্ত মূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। অনেক আমদানিকারকের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া রয়েছে মানিলন্ডারিংয়েরও অভিযোগ।

আজ যে সকল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তারা হলেন- মেসার্স রচনা ট্রেড্রিং কোম্পানি, মেসার্স ব্রাদার্স ট্রেড, মেসার্স সালাহ ট্রেডার্স, খান ট্রেডার্স, আলি রাইচ মিল, বি কে ট্রেডার্স, টাটা ট্রেডার্স, রিজু-রিতু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সাইফুল এন্টারপ্রাইজ, নূর এন্টারপ্রাইজ, ডি এ এন্টারপ্রাইজ, মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, শামীর এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স খান ট্রেডার্স, মেসার্স রায়হান ট্রেডার্স, হুদা ট্রেডার্স, মেসার্স রহমান ট্রেডার্স, সোহা এন্টারপ্রাইজ, ফারহা ইন্টারন্যাশনাল, হামিদ এন্টারপ্রাইজ, জনী এন্টাপ্রাইজ, এস এম করপোরেশন, এস এস ট্রেডিং, এল মদিনা স্টোর, নিউ বড়বাজার শপিং মল, মা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রহমান ইমপেক্স, মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ, সুপ্তি এন্টারপ্রাইজ, মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ, আর ডি এন্টারপ্রাইজ, শাহ ভেন্ডার, ধ্রুব ফারিয়া ট্রেডার্স, এম আর ট্রেডার্স, মাহি অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আলম অ্যান্ড সন্স, এবং জাবেদ ব্রাদার্স।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আজ বিদেশ থেকে পেঁয়াজের কোন চালান এখনও পর্যন্ত ঢাকায় আসেনি। বিষয়টি সম্পর্ক্যে আমি অবগত নই।
মিয়ানমার থেকে একদিনে ৩০ হাজার মণ পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মো. আবছার উদ্দিন। তিনি বলেন, সোমবার মিয়ানমার থেকে ১১০৩.১৭১ মেট্রিক টন (প্রায় ৩০ হাজার মণ) পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...