পোকা দমনে উপকারী ‘পার্চিং’ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

পিবিএ,জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় চলতি আমন ধানের ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এই “পার্চিং” একটি ইংরেজি শব্দ, এর মানে ধানী জমিতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতা হয়। এর উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এই পদ্ধতির নামই ‘পার্চিং’। এই ‘পার্চিং’ পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য অত্যন্ত কম ব্যয়বিহীন এবং পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই উপজেলার কৃষককূলে। কৃষকরা তাদের আমন ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে এবার চলতি আমন মৌসুমে ১৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপন হয়েছে ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে এবং উফশী জাতের ধান রোপন হয়েছে ১৩ হাজার ১শ ৬০ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলার কৃষকেরা এবার আমন ক্ষেতে প্রায় ৯হাজার ৯ হেক্টর জমিতে লাইফ ও ডেট পার্চি এর ব্যবহার কাছেন। পার্চিং দুই প্রকারের- ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডালকে জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। কৃষকেরা তাদের আমন ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে করেছেন। তারা বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ৮টি বাঁশের আগা, কঞ্চি, ডাল ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতেছেন। এসব ব্যবহারের ফলে শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি ক্ষেতের পাচিংকের উপরে বসে সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও উপজেলার কৃষকেরা যথাসময়ে তাদের জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করেছেন। তাদের বহু স্বপ্নের রোপনকৃত ধানের চারাগুলো এখন বড় হচ্ছে। তাছাড়া রোপনকৃত চারাগুলো এখন সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠায় কৃষকদের মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। এখন তাদের আমন ক্ষেতে লাইফ ও ডেট পাচিং-এর ব্যবহার করেছেন কৃষকেরা। তাদের ধানের ক্ষেতে বিভিন্ন গাছের ডাল ও ধইঞ্চা ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আগমন ঘটছে। ধানের জমিতে পাচিং পদ্ধতির মাধ্যমে শালিক, বুলবুলি ও ফিঙ্গে পাখি বসে ধানের ক্ষতিকর পোকাগুলো খেয়ে ফসল রক্ষা করছে। এছাড়া পরিবেশের সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি ধান উৎপাদন কয়েগুন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। সেই সঙ্গে বালাইনাশকের ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ দূষণ মুক্ত হচ্ছে।

উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের সাঁতার গ্রামের কৃষক তৌফিকুল ইসলাম ও কালাই পৌরসভার সড়াইল মহল্লার কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, এবার তাদের জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। রোপনকৃত চারাগুলো এখন সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠেছে। তারা সম্পূর্ণ ক্ষেতে “পার্চিং” পদ্ধতি করেছেন। বিঘা প্রতি আমন ধানের ক্ষেতে ৫টি গাছের ছোট ডাল, বাঁশের কঞ্চি এবং ৩টি জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে দিয়েছেন। ফিঙ্গে, শালিক ও বুলবুলি ওই ডালে বসে খেতের ক্ষতিকর পোকা ধরে খেয়ে ফেলছে। এতে তাদের জমিতে ভালো কাজ হচ্ছে।
উপজেলার পুনট ইউনিয়নের নান্দাইল গ্রামের কৃষক খাজা মিয়া ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বালাইট গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, “পার্চিং”-এর পদ্ধতির ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এতে তারা খুব উপকার পাচ্ছেন।

কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, এই উপজেলায় এক সময় পোকা দমনে ব্যয়বহুল কীটনাশকই ভরসা ছিল কৃষকদের। তাদের উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিক পরিশ্রমও করছিলেন তারা। এখন পার্চিং পদ্ধতিই আশা জেগেছে কৃষকদের মাঝে। বর্তমান পার্চিং-এর পদ্ধতিতে বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ দূষণমুক্ত ও পোকার বংশ বিস্তার কম হচ্ছে। সেই সঙ্গে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমি উর্বরতা বাড়ছে। পার্চিং-এর পদ্ধতির মাধ্যমে এই বছরে ফসল উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।

পিবিএ/আবুবকর সিদ্দিক/এসডি

আরও পড়ুন...