হামলার পর এবার প্রাণ নাশের ‍হুমকি

প্রকাশ্যে থেকেও দেড় মাস অধরা মামলার আসামীরা

পিবিএ,নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরখানে মাদক চোরাকারবার সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের জের ধরে চোরাকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসানের বাবা সাইফুল ইসলাম। হামলার ঘটনায় মামলা হলেও আসামীরা প্রকাশ্যে থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে দেড় মাসেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। প্রকাশ্যে থেকেই একের পর এক সাংবাদিক হাসান ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামীরা। এবে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই সাংবাদিক ও তার পরিবার।

হামলার পরও একের পর হুমকির ঘটনায় উত্তরাখান থানায় শুক্রবার (২৮ মে) সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসান তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে উত্তরখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন। যার জিডি নম্বর-৯১৭। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক ‘আজকের প্রত্রিকায়’ কর্মরত রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর উত্তরখানের আক্তারটেক এলাকার চিহ্নিত কতিপয় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘উত্তরখানে তিন মাদক চোরাকারবারীর হাতে জিম্মি পুরো এলাকা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করেন নুরুল আমিন হাসান। ওই সংবাদে আক্তারটেক এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে সাঈদ আলী, সায়েদ আলীর ভাগিনা ও বাওথারের আবু সাঈদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন এবং মৃত আলাল উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম মাদক চোরাকারবারের তথ্য উঠে আসে।

সংবাদটি প্রকাশের পর থেকেই তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসান ও তার পরিবারের ক্ষতি সাধনে মরিয়া হয়ে উঠে মাদক চোরাকারবারীরা। ওই রির্পোটের পর থেকে সাংবাদিক হাসান ওই এলাকায় না থেকে উত্তরখান মাদারবাড়ীতে থাকেন। যার কারণে তাকে না পেয়ে গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন (৩০), তার মামা সাঈদ আলীসহ (৪৮) তাদের ৩/৪ অজ্ঞাত সহযোগী নিয়ে সাংবাদিক হাসানের বাবা সাইফুল ইসলামের উপর হামলা করেন। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুল ইসলাম ঢাকা মিডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক হাসান বাদী হয়ে বেআইনীভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে গতিরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্য মারধর করার অভিযোগে উত্তরখান থানায় একটি মামলা করেন। যার মামলা নম্বর- ১০(৪)২১।

এ বিষয়ে সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসান, আমার বাবার উপর মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার ঘটনায় মামলা করা হলেও আসামীরা প্রকাশ্যে থাকার পরও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাদেরকে দেড় মাসেও গ্রেফতার করেনি। তারা প্রকাশ্যে থেকে প্রায়ই একের পর এক প্রাণ ণামর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমি ও আমার পরিবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উত্তরখান থানায় একটি জিডি করেছি।

তিনি আরো বলেন- হামলাকারী মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায়, তারা নাকি গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশ ম্যানেজ করে ফেলেছেন। যার কারণে পুলিশ তাদেরকে ধরেনি। মামলার দুই নম্বর আসামী সাঈদ আলী শুক্রবার (২৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও আমার বাবাকে বলে- ‘তোর পোলা ও তোদেরকে একা পেয়ে লই, জীবনে মেরে ফেলবো।’ মামলার প্রধান আসামী সাদ্দাম হোসেন প্রায়ই বলে- ‘মারধর করে মামলা খেয়ে এক লাখ টাকা খরচ করেছি। এবার খুন করে না হয় আরো পাঁচ লাখ টাকা খরচ করবো। তবুও দেখে ছাড়বো’ – বলে হুমকি অব্যাহত রেখেছে।

হাসানের অভিযোগ- ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে হামলাকারীদের আত্মীয় স্বজনদেরকেই স্বাক্ষী করছেন। তাদের আত্মীয়স্বজন তো কখনোই তাদের স্বজনদের না বাঁচিয়ে সত্য কথা বলবেন না। সেই সাথে হামলাকারীরা যে পেশাদার মাদক চোরাকারবারী, আর সেই সূত্র ধরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে হচ্ছে না। মামলার মোটিব ঘুরিয়ে তর্কবিতর্কের কারণে হামলা হচ্ছে বলে প্রমাণ করা চেষ্টা চলছে। যার কারণে হামলার মূল রহস্য রহস্যই থেকে যাচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন- ‘সাংবাদিকের বাবার উপর হামলার ঘটনায় চার্জশিট দিয়ে দেওয়া হবে।’

অপরদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের বলেন- ‘হামলা মামলার আসামীরা গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে) জামিন নিয়েছেন। ওই ঘটনায় চার্জশীট লেখা প্রায় শেষ। শুধু মেডিকেল রিপোর্ট পেলেই আদলতে জমা দিয়ে দিব।’ এ সময় তার কাছ থেকে দেড় মাসেও আসামী গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...