প্রজন্মের রুখে দাড়ানো এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থা

শতাব্দী আলম : নিরাপদ সড়কের দাবিতে ফের উত্তাল রাজধানী। সহপাঠি আবরারের অকাল মৃত্যুতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। তারা নিরাপদ সড়ক চায়। তারা চায় সামাজিক নিরাপত্তা। সর্বোপরি তারা চায় একটি সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা। আমরা সবাই তা চাই। যে অতিউৎসাহি লোকটি নির্বিচারে অনিয়ম, উশৃঙ্খলতা বা গুন্ডামী করছে। সে নিজেও হয়তো পরিবারের জন্য একইরকম নিরাপত্তা প্রত্যাসা করে। তবে অতি লোভ, ক্ষমতার দম্ভ এবং রাজনৈতিক প্রতিপত্তির জোড়ে তারা সাময়িক অন্ধ বনে যায়। যে কারনে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে যে জাতি সুশৃঙ্খল, যার রক্তে রয়েছে বিদ্রোহের শিখা, যে বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে বাঙালি কেন এমন বিশৃঙ্খলা সহ্য করবে। প্রজন্ম বার বার গর্জে উঠছে। সে রাজপথে গগনবিদারী স্লোগন ধরে। তার অধিকার চাই। এইই আমাদের স্বাধীনতা।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ সমাজ বিজ্ঞানীদের জন্য একেবারেই নতুন চিন্তার খোরাক। দ্বিতীয় বারের মত নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন চলছে। কোটা বিরোধী আন্দোলন এরও আগে গণজাগরন মঞ্চ। সবই ছাত্র আন্দোলন। এসবই সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিল বা স্বার্থাণে¦সী দাবিতে নয়। এই আন্দোলনে সবার সমর্থন থাকে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-সমর্থক, বিরোধী দল বা রাজনৈতিক দলের লোকজন, সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, মজুর, রিক্সাচালক, ধনী-গরিব সবাইতো এইসব দাবির সাথে একমত।
জনে জনে ধরে জানতে চান ? দেখবেন সবাই এসব অধিকারের জন্য মুখিয়ে আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়। এর জন্যই সরকার আছে। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান বের করাই সরকারের দায়িত্ব। এখন শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে পারে। দিনের পর দিন রাজপথ অবরুদ্ধ করে জনজীবন অচল করেও লাভ হবে না। যদি না সরকারের সদিচ্ছা থাকে।
আমরা যারা গণপরিবহনে নিত্য যাতায়াত করি তারাই বুঝতে পারি রাজধানীর গণ পরিবহনে কি নৈরাজ্য। সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষও এসব জানে। সামান্য আর্থিক সুবিধা লাভের আশায় সবাই নিরব। পরিবহন সেবার নামে চলছে লুটপাট। আর যাত্রীসেবার নামে হয় অত্যাচার হয়রানি প্রাণহানি।
সূ-প্রভাত স্পেশাল সার্ভিস বাস পরিবহন টঙ্গীর গাজীপুরা থেকে রাজধানীর সদরঘাট রোডে চলাচল করে। বরাবরের মতই টঙ্গীতে এর নিয়ন্ত্রণে পরিবহন শ্রমিক লীগের নামধারি নেতাগণ। টঙ্গীর মাঝে এমনিতেই গাজীপুরা-বাস্তুহারা এলাকায় অপেক্ষাকৃত মাদক, ছিনতাই, দূর্বৃত্ত্বপনা বেশি। গাজীপুরায় সূ প্রভাতের শেষ স্টপেজ। যে কারনে সূ-প্রভাতের চালক হেলপার অন্য পরিবহনের চাইতে বেশী বেপরোয়া। কারনে এসব বাসে কতিপয় দূর্বৃত্ত্ব চালক হেলাপারের অন্তরালে ছিনতাই পকেটমার চক্রের সাথে জড়িত। এসব বলে শেষ করা যাবে না। আমার এক সংবাদকর্মী বন্ধুর ভাইকে গাড়ি থেকে তুলে বাস্তুহারা আটকিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সাংবাদিকের আত্মীয় পরিচয় পেয়ে পুলিশের সহযোগীতায় ছাড়া পায়। তাই বলে সবাই এমনি এমনি ছাড়া পায় না। মুক্তিপণ লাগে পাশাপাশি শারিরিক লাঞ্ছনাতো আছেই।
সবকিছুর জন্য সরকারের দায়ভার। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শপথ করেই সরকার। দেশে এখন একচ্ছত্র আওয়ামী লীগ সরকারের আধিপত্য। সংসদে বা সংসদের বাহিরে প্রতিবাদি কণ্ঠ বলতে কোন বিরোধী দল নেই। মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে কিছু তুলে ধরা হয়। তবে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। একের পর এক ছাত্র আন্দোলন তারই নজির। বলার জন্য একটি প্রজন্ম ফুঁসছে। সুযোগ পেলেই তারা রাজপথে গর্জে উঠে। এদের আন্দোলন অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিপ্লবী ভাষন প্রচার করে। সেই ভাষন মাইক মঞ্চ ছাপিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক প্রচার হয়। এই প্রজন্ম প্রতিদিন সেই ভাষন আর বানি শুনে। নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রতিচ্ছবি জ¦জল্যমান। তারা সেই বাংলাদেশ দেখতে চায় যেখানে সন্ত্রাস দূর্নীতি থাকবে না। যেখানে নিরাপদ সড়ক থাকবে। সমাজ হবে সুষ্ঠু সুন্দর। পরিবেশ থাকবে সুনির্মল।
এমন দেশটি সাজিয়ে তুলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তবে নেতৃত্ব দিতে হবে সরকারকে। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে বলেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাজপথে। তাদের- আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে তা বাস্তবায়িত করাই হবে সরকারের সুবিবেচনা। নচেৎ এভাবে একটি একটি করে হাজারটা দাবির বোঝা চাপবে। সাধু সাবধান। চাইতে চাইতে একদিন এই প্রজন্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে না নামে।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

আরও পড়ুন...