প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন সোহাগের

ইছা হক, রাবি: উচ্চতা ৩ ফিট। ছোট্ট বালকের মত দেহ মাত্র ২৮ কেজি ওজন তার। তবে বয়সের কোঠা পেড়িয়েছে ১৮। জন্ম থেকে গ্রোথ হরমোন (সোমাটোট্রপিন) জনিত জটিলতার কারণে বেড়ে উঠা হয়ে উঠেনি তার। এই শারীরিক গঠন নিয়ে সহপাঠী, পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা। তবে এসবের কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। কৃতিত্বের সাথে পেরিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি। এখন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন তার চোখে। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আঞ্চলিক কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ”ঘ” ইউনিটে ভর্তি পরিক্ষা দিতে আসা সোহানুর রহমান সোহাগের কথা।

সোহানুর রহমান সোহাগ নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার মো. ফজলুর রহমানের ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন মুহুরী। দুই ভাই একবোনের মধ্যে সোহাগ দ্বিতীয়। সে গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৪.৮৮ পয়েন্ট ও নাটোর বিলচলন শহীদ শামজ্জোহা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে জিপি ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখছেন সে। ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সোহাগ। ঢাবিতে চান্স না পেলেও রাবি ও জাবিতে পড়াশোনা করতে হবে এমনটাই ইচ্ছে তার।পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সোহাগ।

গ্রোথ হরমোনের সমস্যার কারণে জন্মের পর থেকেই সোহাগ এমন আকৃতি। তার দেহ ছোট বালকের মতো। শরীর হালকা হওয়ায় ওজন মাত্র ২৮ কেজি। তার পরিবারে অন্য কোনো সদস্যের এমন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন সোহান।

জানতে চাইলে সোহান বলেন, গ্রোথ হরমোন সমস্যার কারণে জন্ম থেকেই আমার এরকম শারীরিক গঠন। এ নিয়ে অনেকবার ডাক্তারও দেখিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। ডাক্তাররা বলছে আমার গ্রোথ হরমনের সমস্যা। আমার শারীরিক আকার-আকৃতি এমনই থাকবে। আগে আরো শুকনা ছিলাম এখন বয়সের ছাপে একটু মোটা লাগছে আমাকে।

সোহান আরো বলেন, আশেপাশে মানুষ আমাকে নিয়ে অনেক কটু কথা বলে। মানুষের এমন কথায় আমি কান দেয় না। আমি আমার উদ্যম গতিতে এগিয়ে চলছি। আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেনো আমার পরবর্তী জীবনের বাধা না সেই চেষ্টা করছি। এখন আমার স্বপ্ন আমি ঢাবিতে পড়বো এবং পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবো। ঢাবির পরে রাবি ও জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিবেন এ মেধাবী।

রাবি ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, পরীক্ষার হল পরিদর্শন করার সময় আমি ছেলেটিকে দেখেছি ।জন্ম থেকেই তার এ সমস্যা। সোহাগের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও সেগুলোকে পিছনে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত আসাকে আমি সাধুবাদ জানাই। সমাজেরও উচিত এদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করা। সে যদি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পায় তাহলে সঠিক পরিবেশ পাবে বলে জানান তিনি।

 

আরও পড়ুন...