বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পাচ্ছে না দেশের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার ( ১ জানুয়ারি) সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের নতুন সব বই পাওয়ার কথা ছিল। আর মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি বই (বাংলা, ইংরেজি, গণিত) পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক স্কুলেই প্রাথমিক শ্রেণির সব বই পৌঁছেনি।
সিংহভাগ মাধ্যমিক স্কুলেও পৌঁছেনি তিনটি বই। সবমিলেই বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীরা আজ নতুন বই পাচ্ছে না। তবে নতুন বই প্রাপ্তি বিলম্ব হওয়ায় আজ নতুন বইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বছরের প্রথম দিনে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে বই উৎসব করত সরকার। কিন্তু ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে’ এই বই উৎসব থেকেও সরে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আজ সারা দেশে কোথাও বই উৎসব হবে না। তবে কিছু কিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা নতুন বই পাবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত সারা দেশে প্রাথমিকের পৌনে ৪ কোটি এবং মাধ্যমিকের ৪ কোটি ৪২ লাখ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর্ট কার্ডের সমস্যাসহ নানান কারণে বই পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, চলতি জানুয়ারির মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা সব বই পেয়ে যাবে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সব বইয়ের পিডিএফ আপলোড করা থাকছে। কেউ চাইলে সেখান থেকেও সহযোগিতা নিতে পারবেন। তাই শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বই সরবরাহের বিলম্বের কারণ হিসেবে জানা যায়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা সমালোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার চালু করেছিল নতুন কারিকুলাম। অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই কারিকুলাম বাতিল করে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয় আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই ছাপানোর টেন্ডারও। পরিবর্তে মাধ্যমিক স্তরে চালু করা হয় ২০১২ সালের কারিকুলাম। তাই আগের কারিকুলাম অনুযায়ী বই প্রস্তুত ও নতুন টেন্ডার করে বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেকটা সময় লেগে যায় এনসিটিবির। এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির মোট ৬৫৫টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়েই বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কাহিনি ও গ্রাফিতি। এ ছাড়া গত কয়েক বছর ৩২ থেকে ৩৪ কোটি বই ছাপা হলেও আগামী বছরের জন্য প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপতে হবে। এতেও কিছুটা সময় লেগে যাবে।