প্রথিতযশা সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

পিবিএ,ঢাকা: একুশে পদক প্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৩ সালের আজকে এই দিনে তিনি মারা যান। ১৯৩৯ সালের ২১ জুলাই কুমিল্লার বিখ্যাত দারোগার বাড়িতে জন্ম নেওয়া এ প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সংবাদ বিশ্লেষক ভয়েস অব আমেরিকার ঢাকা সংবাদদাতা হিসাবে সারা বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে সমধিক পরিচিত ছিলেন।

তিনি সাংবাদিক সমাজের প্রিয়ভাজন নেতা ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক মেয়াদে তিনি ডিইউজে, বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক হিসাবে লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পকিস্তান আমলে গণতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসন অন্দোলনে অংশ নিয়ে বহুবার কারাবরণ করেন তিনি। ২০১১ খ্রিস্টব্দে তিনি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন, যা তার স্মৃতিশক্তি ও স্বাভাবিক জীবনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এম এ, এলএলবি, জার্নালিজমে ডিপ্লোমা করেন।

গিয়াস কামাল চৌধুরীর সাংবাদিকতা শুরু হয় ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে, ইত্তেফাক গ্রুপ থেকে প্রকাশিত ‘ঢাকা টাইমস’ পত্রিকার মাধ্যমে। পরবর্তী কালে তিনি ইংরেজী দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকার আইন প্রদায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় যোগদান করেন। কার্যত এখান থেকেই তার সাংবাদিকতার বিকাশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণসহ জাতীয় গণতান্ত্রিক ও পেশাজীবীদের অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সাংবাদিক জীবনে গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও ভয়েস অব আমেরিকাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় কাজ করেছেন।

১৯৮০-র এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রতিদিন ‘গিয়াস কামাল চৌধুরী, ভয়েজ অব আমেরিকা’র ঢাকার বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য রিপোর্টের জন্য বাংলাদেশের সংগ্রমী মানুষ আকুল হয়ে থাকতো। তিনি শেষ জীবনে দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সমান তালে। নিজের কর্মকে প্রতিষ্ঠিত করে ১৯৯২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।

গিয়াস কামালের বাবা রফিক উদ্দীন চৌধুরী একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। মা মুনীর আখতার খাতুন চৌধুরাণী ছিলেন কাব্যপ্রতিভার অধিকারী। পিতার কর্মস্থল, চট্টগ্রাম শহরে জন্ম হলেও গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্কুলজীবন কেটেছে ফেনী (বর্তমানে সরকারি পাইলট) হাইস্কুলে। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তিনি মাস্টার্স ও আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি ছাড়াও সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তখনো এ দেশে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি বা অনার্স কোর্স চালু হয়নি।

গিয়াস কামাল চৌধুরী রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ। ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজের, যেখানে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার হবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় ১৯৬২ সালের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি কারারুদ্ধও হয়েছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে কুমিল্লা শহরের ঐতিহ্যবাহী দারোগা বাড়ির সাথে তার ছিল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা। সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু সম্পর্কের দিক দিয়ে তার চাচা। কবি বেলাল চৌধুরী তার আপন ভাই।
নব্বই দশকের প্রথম দিকে গিয়াস কামাল চৌধুরী ব্রেইন হেমারেজে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও বিশেষ করে ২০১১ সালে আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যধিতে। ফলে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং চলৎশক্তিরহিত অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন বহু দিন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি সরব সংগ্রামী জীবনের অবসান হলেও গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার কায়েমের আন্দোলনে তার বিরাট অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...