প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাঙ্গারহাট-পোলটানা সড়ক দ্রুত নির্মানের দাবি এলাকাবাসীর

পিবিএ,গোপালগঞ্জ: দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের যাতায়েতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা ঠিকভাবে স্কুলে যেতে পারে না। আর বৃষ্টি-বর্ষা হলেতো কোন কথাই নেই। তা’ছাড়া গর্ভবতী মায়েরা অসুস্থ হলে তাদেরকে শহরের হাসপাতালে নিতে হলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। গ্রামে বসে ডেলিভারী করতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করে। ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ী পর্যন্ত রাস্তাটি দ্রুত নির্মান করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন কোটালীপাড়া উপজেলার পোলটানা গ্রামের গৃহবধূ রীতা বাড়ৈ (৪৫)।

দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের যাতায়েতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে
ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ী পর্যন্ত সড়েকর বেহাল অবস্থা

শুধু তিনিই নন ওই গ্রামের রেনুকা বাড়ৈ (৫৫), অমল বাড়ৈ (৫০), পালাশ বাড়ৈসহ (২৫) আরো অনেকেই তাদের যোগাযোগ ব্যাবস্থার সমস্যার কথা বলেছেন। রাস্তাটি নির্মান হলে ৮/১০ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী। জানাগেছে, কোটালীপাড়া উপজেলার বিলাঞ্চল নামে খ্যাত পোলটানা গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য উন্নত কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। খালের পাড়, পুকুরের পাড় কিংবা জমির আল ঘেষে গড়ে ওঠা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয়।

স্কুলগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও অসুস্থ্য রোগী নিয়ে নিত্য সমস্যায় পড়তে হয় এলাকার মানুষের। ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ি রাস্তাটি নির্মানের দাবী এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের। মানুষের দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ী পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ হাতে নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। সড়কের দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তাও নির্মিত হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বাকি অংশের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সড়কটি এখন যাতায়াতের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ী পর্যন্ত সড়েকর বেহাল অবস্থা

স্কুলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা জানায়, বৃস্টি হলে রাস্তা দিয়ে হেটে স্কুলে যেতে তাদের কষ্টহয়। তা’ছাড়া ভাঙ্গা কাঠের ব্রীজ দিয়ে চলাচলের সময়ও তাদের ভয় করে। এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে এ সড়কটি নির্মানের দাবীতে শতাধিক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পীড়ারবাড়ী হাট-বাজার কমিটির সভাপতি অরুন মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক, সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মধু, বিপুল বিশ্বাস, ব্যবসায়ী প্রকাশ বালা, গুরুদাস মল্লিক, বিপ্লব হালদার বক্তব্য রাখেন।

গ্রামবাসী রেনুকা বাড়ৈ (৫৫) বলেন, সড়কের কাজ না হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই সড়কের মাঝে একটি কাঠের পোল রয়েছে। এটিও জরাজীর্ণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা এ পোলটি দিয়ে চলাচল করছে। আমাদের দূর্ভোগ এখর চরমে পৌঁছেছে। গ্রামবাসী অমল বাড়ৈ (৫০) জানান, সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে। কোন যানবাহন এখন আর এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে চায় না। ফলে শিক্ষার্থী ও রোগীরা চরম ভোগান্তি পড়েন।

ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ী পর্যন্ত সড়েকর বেহাল অবস্থা

পীড়ারবাড়ী হাট-বাজার কমিটির সভাপতি অরুন মল্লিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হাটটি সংস্কার করা হয়নি। হাট-বাজারে প্রবেশের একটি মাত্র রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে পারেনা। তিনি আরো বলেন, দ্রুতার সহিত যদি আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করা না হয় তা হলে আমরা আরো কঠিন কর্মসূচি দিবো।

সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক বলেন, বাজারের বিভিন্ন গলির রাস্তাগুলোও মেরামত করা প্রয়োজন। বাজারের কোথাও একটি লাইট নেই। সন্ধ্যার পরে একটি ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে অনেকবার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দিয়েও কোন লাভ হয়নি। সাদুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ভীম চন্দ্র বাড়ৈ জানান, বিলের মধ্য দিয়ে পায়ে হাটা রাস্তাটি প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার লম্বা। মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ হলেও অর্থাভাবে বাকি সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে।

ভাঙ্গারহাট-পোলটানা-নৈয়ারবাড়ী পর্যন্ত সড়েকর বেহাল অবস্থা

এই সড়কটি নির্মান হলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের সুবিধা হতো। হাজার হাজার কৃষক সড়ক পথে তাদের উৎপাদিত ফসল বাড়িতে আনতে পারতো। সেক্ষেত্রে তাদের খরচ ও কম হতো। সড়কটি নির্মানের দাবী জানিয়ে চেয়ারম্যান আরো জানান, সড়ক নির্মান করা হলে এ অঞ্চলের মানুষর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি অতি দ্রুতারসহিত পীড়ারবাড়ী হাট-বাজারের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো।

পিবিএ/বিএস/আরআই

আরও পড়ুন...