আসাদুল্লাহ বাদল : তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান তার দেশে বিদ্রোহের সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সংযুক্ত হয়ে তার অনুসারীদের রাস্তায় নামাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনকি ওই বিদ্রোহ পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যথাসময়ে ভিডিও কল দেওয়ার মাধ্যমেই। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এমনই কার্যকর। ফলে এই প্রযুক্তির সঙ্গে থাকাই মঙ্গল। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার জন্য।
বিশ্বনেতারা বেশিরভাগই টুইটার ব্যবহার করেন। তারা তাদের বক্তব্য টুইট করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সময় সময় টুইট করেন। এই তালিকা আরও দীর্ঘ। এই টুইটের ফলে দেশ ও দেশের বাইরের অনেকেই অনেক বিষয় সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা পেতে পারে।
বাংলাদেশে টুইটার ব্যবহারকারী একেবারেই কম। বরং অধিকাংশই ফেসবুক ব্যবহারকারী। বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর প্লাটফরমে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত ফেসবুক পেজ চালু করা। এতে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর সঙ্গে ভার্চুয়াল সংযোগ বাড়তে পারে। এমনিতেই তিনি আগে থেকেই ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন সরকারি কাজ করেন। যদি নিজে ফেসবুক পেজ চালু করেন, তাতে তার বক্তব্য জানার সুযোগ পাবে দেশবাসী। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্যের বাইরে ব্যক্তিগত মত ও অ-আনুষ্ঠানিক [যেকোন সময়] বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ বাড়বে। কেবল কখন তিনি কোন অনুষ্ঠানে কি বক্তব্য দিয়েছেন আর কতটুকু সম্পাদন করে কোন সংবাদে প্রকাশ হয়েছে এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এ ছাড়া যেকোন সময়ও যার যে বক্তব্যটি দেখে নেওয়া দরকার, তা দেখে নিতে পারবেন। লেখা বক্তব্যের চেয়ে ভিডিও বক্তব্য এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বিশেষত করোনাকালে যেসব বিভ্রান্তি চালু আছে এসব ব্যাপারে তার বক্তব্য জনগণকে ঠিক পথে থাকার জন্য সহায়তা করতে পারে। এছাড়া যারা নকল আইডি চালু করে বিভ্রান্ত করেন, তাদের মতলবও ধ্বংস হবে। অনেক মন্ত্রী ও নেতারা ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনেক বেশি আস্থাশীল হতে পারে।
চলতি ১৮ এপ্রিল করোনাকালে জাতীয় সংসদের এক ঘণ্টার বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে এসএমএস গেছে খাদ্যের জন্য। তিনি সুরাহাও করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ফোন নম্বর হয়তো খুব কম ব্যক্তিই জানেন। ফেসবুক পেজ হলে এটি আরও অনেক সহজ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার জন্মবার্ষিকের লাইভ অনুষ্ঠানে ফোন করে চমকে দিয়েছিলেন। এমন চমক ফেসবুকের কল্যাণে আগামও দেওয়া সম্ভব।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অন্তত তার দলের অনুসারীরা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারবে। যারা তার বক্তব্যের বিরোধীতা করতে চায়, সেটিও কমেন্ট দেখে আরও গতিশীল কোন কর্মকাণ্ড করা যায় কিনা, সেটি করা যেতে পারে। সমালোচনা হউক আর আলোচনা হউক গণতান্ত্রিক সমাজে প্রধানমন্ত্রীর একেবারে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম ফেসবুক।
দেশে বিদেশে থাকা বাংলা ভাষাভাষী অসংখ্য মানুষই হয়তো এতে প্রকৃত অবস্থান জানতে সহায়ক হতে পারে। বিভিন্ন পরামর্শও হয়তো তারা প্রধানমন্ত্রীকে দিতে পারবেন।
২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট যোগফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘নকল’ ফেসবুক আইডি ও পেজ চালু থাকা সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ হয়। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় তার মোবাইল ফোন নম্বর ও ইমেইল এড্রেস প্রকাশ করেছিলেন।
তখন তিনি নিজেই জানিয়েছেন ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল আইডি না থাকার কথা। তবু ফেসবুকে অসংখ্য ‘নকল’ আইডি চালু থাকে। প্রধানমন্ত্রী এও জানান তার বোন শেখ রেহানা, সন্তান সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুলের নামেও ফেসবুকে আইডি নাই। তবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ চালু আছে। এছাড়া শেখ রেহানার সন্তান রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে ভেরিফায়েড পেজ চালু আছে। কিন্তু ফেসবুকে এমন আইডি অসংখ্য।
এ ব্যাপারে একাধিকবার আওয়ামী লীগ দলীয় ভাবে ব্রিফিং করে একই তথ্য জানিয়েছে। সরকারিভাবেও এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এরপরও তাদের নামে নকল আইডি চালু রয়েছে।
অনেকেই এসব নকল আইডিতে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করেন। লাইক দেন, কমেন্ট করেন। হয়তো তারা ধরে নেন, এসব পোস্টের বক্তব্য যথাযথ। কিন্তু যার নামে আইডি নেই, সেখানে কি পোস্ট করা হলো, তাতে কি আসে যায়।
২০১৯ খ্রিস্টাব্দে ৮ ফেব্রুয়ারি “প্রধানমন্ত্রীর নামে ফেসবুকে নকল ৭৫২ আইডি বন্ধ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। একই দিনে যোগফলে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ হয় “প্রধানমন্ত্রীর নামে ভুয়া আইডি কারা চালায়?” শিরোনামে।
বিটিআরসি ৭৫২ আইডি বন্ধ করার পরও ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নকল আইডি, পেজ ও গ্রুপ চালু থাকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ “প্রধানমন্ত্রীর নামে এখনও ‘ ফেসবুকে নকল আইডি’ চালু” শিরোনামে আর একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। স্মরণীয়, যোগফলে ১৯ আগস্ট ২০১৮ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘নকল’ ফেসবুক আইডি ও পেজ চালু থাকা সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য যোগফলকে জানিয়েছিলেন রিপোর্টটি ফলদায়ক হতে পারে। এটি যথাযথ দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। ঠিকই ৬ মাস পরে রিপোর্টটি ফলদায়ক হয়েছিল।
নিজের নামে আইডি চালু করলে আরও বেশি ফলদায়ক হবে বলেই মনে হয়।
লেখক : সম্পাদক, দৈনিক যোগফল
তারিখ : ০১ মে ২০২০।