প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চায় পিটিআই

নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির তথ্য ফাঁস করে দেয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজা ও প্রধান বিচারপতি কাজি ফয়েজ ইসার পদত্যাগ দাবি করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)। শনিবার রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলি চাত্তা সংবাদ সম্মেলন করে ভোটে জালিয়াতি করার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, পরাজিত প্রার্থীদের নির্বাচনে বিজয়ী বানানো হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান বিচারপতি। এ অভিযোগ করে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তোলপাড় হতে থাকে পাকিস্তান। ইমরান খানের পিটিআই ভোটে জালিয়াতির যে অভিযোগ তুলছিল, তা আরও গতি পেয়েছে। তারা প্রমাণ হিসেবে লিয়াকত আলির এই বক্তব্যকে এখন সামনে আনছে। পাকিস্তানে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পিটিআই ও তার মিত্ররা। এই অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ঐতিহ্যবাহী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।

অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডির পদত্যাগী কমিশনার লিয়াকত আলির মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)। দলটির অন্যতম নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ দুনিয়া নিউজকে বলেছেন, কমিশনার লিয়াকতকে মনে হচ্ছে একজন ‘সাইকো’। এ জন্যই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, লিয়াকত আলি যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তাতে পিটিআইয়ের অবস্থানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে যে, কিভাবে রাতের আধারে জনগণের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে।

পিটিআইয়ের মুখপাত্র বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার স্বীকার করেছেন যে, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কমপক্ষে ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। তাদের সেই বিজয়কে পরাজিতের বিজয়ে পরিণত করা হয়েছে। লিয়াকত আলির বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে পিটিআইয়ের বক্তব্য ঠিক। পিটিআই বলে আসছে তার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অধিক সংখ্যক নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ফলে পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র এসব প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে রাতারাতি সংখ্যালঘু বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই মুখপাত্র আরও দাবি করেন, দ্রুত নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উচিত পিটিআইয়ের কাছ থেকে চুরি করা ৮৬টি আসন ফিরিয়ে দেয়া। জনগণের ম্যান্ডেট যারা চুরি করেছেন এর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি ব্যক্তিকে সংবিধান ও আইনের অধীনে শাস্তির দাবি করেন ওই মুখপাত্র।

লিয়াকত আলির ওই ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি কমিটির মিটিং করেছে পিটিআই। পরে তারা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। আলি মুহাম্মদ খান বলেন, পিটিআইকে তার নির্বাচনী প্রতীক থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় বেশির ভাগ নেতাকে জেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু জনগণ ভোগ দিয়েছেন পিটিআইয়ের অনুকূলে। তিনি আরও বলেন, আমরা রাওয়ালপিন্ডি থেকে অভিযোগ শুনতে পেয়েছি যেখানে আমাদেরকে ম্যান্ডেট বা আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার। আমাদেরকে ৮০টি আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সরদার লতিফ খোসার সঙ্গে অন্য নেতারা ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বলেন, ইমরান খান আমাদেরকে বলেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যেভাবে ক্ষমা করে দিতেন, ঠিক তেমনি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। এ সময় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি (ইমরান) কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবেন না। ইমরান প্রশ্ন রেখেছেন, যদি নির্বাচন এমনই হয়, তাহলে কেন বোগাস নির্বাচন করার জন্য এত অর্থ খরচ করা।

মুখপাত্র খোসা বলেন, লিয়াকত আলির তথ্য উন্মোচনের ফলে চোখ খুলে গেছে। এখন আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি যে কেন নির্বাচনের দিন ফোন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরে রাওয়ালপিন্ডি থেকে পিটিআইয়ের প্রার্থী আয়াজ আমির ও সীমাবিয়া তাহির সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির প্রমাণ আছে তাদের হাতে।

রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ ইলাহির স্ত্রী কাইসরা ইলাহি বলেন, তিনি আশা করেন কমিশনার লিয়াকতের পদত্যাগ হলো বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা। গুজরাটের কর্মকর্তা হায়দার আব্বাসও হয়তো তার পথ ধরবেন। ওদিকে পিপিপির তথ্য সচিব ফয়সাল করিম কুন্দি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময় পাড় করছে পাকিস্তান। নতুন একটি পার্লামেন্ট শিগগিরই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তবে লিয়াকত আলি যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কথা বলেছেন সেসব নিয়ে গভীর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন পিএমএলএনের তথ্যসচিব মরিয়ম আওরঙ্গজেব। একই সঙ্গে বহির্গমন নিষিদ্ধ তালিকায় লিয়াকত আলির নাম রাখার দাবি করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন...