প্রভুভক্ত টাইগার এখন সন্ত্রাসী!


পিবিএ,নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টার রূপগঞ্জ বাজারের দর্জি সিদ্দিক মিয়ার প্রভুভক্ত কুকুর টাইগার এখন খাদ্য অনুসন্ধানী সন্ত্রাসী। ক্ষুধা পেলেই বাজার ও রাস্তায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের মতো পথচারীর সামনে এসে দাঁড়ায়। দুপা উঁচু করে তাকে শক্ত করে ধরে রাখে। আটকে থাকা পথচারী যতক্ষণ ক্ষুধার্ত টাইগারকে কিছু খেতে না দেবে, ততোক্ষণ তাকে রাস্তায় পথ চলতে দেবে না। অথচ প্রভুভক্ত এ কুকুরটি একসময় ছিল খুব শান্তশিষ্ট।

ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বেওয়ারিশ টাইগার চার বছর আগে রূপগঞ্জ বাজারে মধ্যবয়স্ক দর্জি সিদ্দিক মিয়ার প্রিয় পালিত কুকুর ছিল। ওই দর্জির বাড়ি ছিল বাজার সংলগ্ন মৌয়াটি গ্রামে। তিনি শিশু টাইগারকে রাস্তা থেকে কুড়ায়ে এনেছিলেন। টাইগার তার পরিবারের সদস্যের মতোই প্রিয় ছিলো। তাকে প্রতিদিন দর্জি মাছ, মাংস ও বিভিন্ন ধরনের রুটি, কেক খেতে দিতেন। সেজন্য টাইগার ছিল এলাকার আর দশটা কুকুরের চেয়ে স্বাস্থ্যবান ও নাদুস-নুদুস। অনেকটা ছোট আকারের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো।

২০১৪ সনে টাইগারের প্রভূ দর্জি সিদ্দিক মিয়া অসুস্থ হয়ে মারা যান। প্রভুহারা টাইগার তখন বড় অসহায় হয়ে পড়ে। একদিকে প্রভূর টান অন্যদিকে খাদ্য না পেয়ে সে এলাকাজুড়ে আর্তনাদ ও ছোটাছুটি করতে থাকে। প্রভু হারানোর শূন্যতা আর ক্ষুধার তাড়নায় শান্তশিষ্ট টাইগার ক্রমান্বয়ে খাদ্য অনুসন্ধানী সন্ত্রাসী রূপ নেয়। ক্ষুধা পেলেই সে দৌড়ে রাস্তায় পথচারীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসী ভঙ্গিতে তাকে (পথচারীকে) শক্ত করে আটকে রাখে। পথচারী তখন রাস্তার পাশের দোকান থেকে বি¯ু‹ট, কিংবা অন্যকোন খাবার কিনে খেতে দিলে তবেই কুকুরটি তার পথ ছেড়ে দেয়। আশ্চর্যের বিষয় সন্ত্রাসী টাইগার কাউকে কখনো কামড় বা সামান্য আঘাতও করে না।
বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জনৈক অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীর ৩/৪ সদস্যের টিম গবেষণার জন্য টাইগারকে নিয়ে যেতে এসেছিলেন। রূপগঞ্জ বাজারের একটি রাজনীতিক মহল তাতে আপত্তি ও বাঁধা দেয়ায় তারা শূন্যহাতে ফিরে যায়।

এলাকার বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুজিত চৌধুরী জানান, কুকুর টাইগারকে সিদ্দিক দর্জি নিজের সন্তানের মতো আদর করতো, অন্য খরচ কমিয়ে তাকে দামি দামি খাবার খেতে দিত। দর্জি নিজ হাতে প্রতিদিন তাকে সাবান দিয়ে গোসল করাত। গ্রামাঞ্চলে কোনদিন একটা কুকুরের বাচ্চাকে এতো আদর করতে আমি আর দেখিনি।

প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুধা পেলে বা দীর্ঘদিনের অপুষ্টিতে একটি কুকুর সন্ত্রাসী ভঙ্গিতে পথচারীকে আটকিয়ে খাবার আদায় করতে পারে। এক্ষেত্রে টাইগারের প্রভূর (দর্জির) অতিরিক্ত যত্ন, খাবার খাওয়ানো তারও প্রভাব পড়েছে। এটি প্রাণির কোন স্বাভাবিক আচরণ নয়, বিরল ঘটনা।

অতীতের প্রভুভক্ত কুকুর টাইগার এখন সন্ত্রাসী। রূপগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা এখন শঙ্কিত, কার সামনে টাইগার এসে দাঁড়ায়। কার পকেট থেকে তাকে খাবার কিনে দিতে টাকা খরচ হয়ে যায়। অচেনা পথচারীরা কামড়ের ভয়ে থমকে দাঁড়ায়। টাইগার দিন দিন অযত্ন আর অপুষ্টিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কে এই অসহায় টাইগারকে প্রভু সিদ্দিক দর্জির মতো লালন পালনের ভার নেবে?

পিবিএ/ বিজয় চন্দ্র দাস/এমএসএম

আরও পড়ুন...