যেভাবে প্রযুক্তি ও টেলিকম খাতে ক্যারিয়ার গড়বেন

science-and-information-job

পিবিএ,ডেস্ক: প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে বাড়ছে টেলিফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। বিশেষ করে ইন্টারনেটকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে টেলিকম খাতের প্রসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এ জন্য এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে দক্ষ কর্মীবাহিনী। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে এ খাতকেই বেছে নিচ্ছেন তরুণেরা। এই খাতে ক্যারিয়ার গড়লে একজন কর্মী দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। বর্তমানে আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়ার একটা ধুম পড়ে গেছে। এখানে চাকরি করার কারণে একজন কর্মী অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে।

যা যা থাকতে হবে:

ক্যারিয়ার গঠনে শুধুই যে প্রযুক্তিনির্ভর সার্টিফিকেট থাকতে হবে, এমনটি নয়। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছে কিন্তু প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ, জানাশোনা আছে এমন তরুণ-তরুণী এদিকে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে। এই খাতে সফলভাবে ক্যারিয়ার গঠনে আগ্রহীদের কিছু বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।

যাদের জন্য:

টেলিকম একটি প্রযুক্তিনির্ভর খাত হলেও এই খাতে প্রযুক্তিভিত্তিক পেশা ছাড়াও অন্যান্য পেশার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। একদিকে যেমন টেলিকম প্রকৌশলী, তড়িত প্রকৌশলী ও কম্পিউটার প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে, তেমনি দক্ষ আইনজীবী, মানবসম্পদ কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষক ও বিপণন কর্মকর্তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

ডিজিটালাইজেশনের ফলে টেলিকম খাতের ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হতে থাকায় আরো বিভিন্ন ধরনের পেশার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে টেলিকম খাত বিশ্বজুড়ে একটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগে টেলিকম খাতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সেবার সংযোজন ঘটছে। এই সেবাগুলো ঠিকঠাক দেওয়ার জন্য এমন সব পেশাজীবীর দরকার, যারা প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবে।

তৈরি হোন এখনই:

তরুণরা নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছু করতে পারেন। যেমন—টিমওয়ার্ক একটি খুবই প্রয়োজনীয় দক্ষতা চাকরির ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ সময়ই একটি দলকে একটি সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রযুক্তি জগতে নিত্যনতুন সমস্যার সমাধানের জন্য অনেক সময় কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র বারবার পুনর্বিন্যাস করে। এ ক্ষেত্রে নানা রকম মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারাটা অনেক বড় গুণ। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে বিভিন্ন ক্লাব ও ভলান্টারি কাজের মাধ্যমে তাঁদের এই দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন। কোনো খাতে কাজ করতে চাইলে ওই খাত নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ এবং জ্ঞানার্জন করতে হবে। নতুন জিনিস শেখার প্রতি অদম্য আগ্রহ একজন নিয়োগপ্রত্যাশীকে অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে পারে। সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে।

আছে চ্যালেঞ্জ:

ডিজিটালাইজেশনের ফলে শুধু টেলিকম খাত নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর সব খাতের ক্যারিয়ারই বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। তাই সফলভাবে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য তরুণ বয়স থেকেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নতুন নতুন বিষয় শেখা ও আয়ত্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, এই সেক্টরে ক্যারিয়ারের শুরুতেই নতুন যেকোনো কিছুর প্রতি কৌতূহলী মনোভাব থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এবং শুধু প্রযুক্তি খাত নয়, সব ক্ষেত্রেই নিয়মানুবর্তিতার কোনো বিকল্প নেই। এভাবে চলতে পারলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা বেড়ে যাবে, যা অবশ্যই আপনার ক্যারিয়ারের সাফল্যে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

হতে হবে উদ্ভাবনী:

টেলিকম কম্পানিসহ প্রযুক্তি খাতের সব প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এখন মূলত উদ্ভাবনী ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। গ্রাহকদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠান যত বেশি উদ্ভাবনী হতে পারবে, তার সাফল্যের সম্ভাবনা ততই বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টি একটি প্রতিষ্ঠান কতটা সাফল্যের সঙ্গে সম্পাদন করতে পারছে তা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণী দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। প্রতিষ্ঠানের সব পর্যায়ে উদ্ভাবনী মানসিকতার পেশাজীবীরা না থাকলে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। তরুণরাই পারে উদ্ভাবনী দক্ষতা দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।

চাকরির সুযোগ:

স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রগ্রাম, অ্যাডভান্সড ইন্টার্নশিপ প্রগ্রাম, ইনোভেটর্স, লার্ন ফ্রম লিডার্স ও ক্যাম্পাস টু করপোরেট কর্মসূচির মাধ্যমে আগ্রহী তরুণরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলালিংক থেকে আমরা এই কর্মসূচিগুলো করাচ্ছি। আমাদের এখানে অংশগ্রহণ করে অনেকেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বাংলালিংকে সরাসরি চাকরির সুযোগ পেতে পারেন।

মূল কথা হলো—সৃষ্টিশীলতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মনোভাবসহ একজন চাকরিপ্রার্থীকে দক্ষতার বিচারে এগিয়ে রাখে। আর এ ধরনের দক্ষতা অর্জনের শুরুটা হতে হবে শিক্ষাজীবন থেকেই।

প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে:

আমাদের অনেকের ধারণা, যেকোনো ধরনের চাকরিই তার জন্য যথেষ্ট। কেউ কেউ জুতসই প্রতিষ্ঠানও নির্ধারণ করতে পারে না। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কাজের উপযোগী যোগ্য লোকটিকেই শুধু বেছে নেয়। তাই একজন চাকরিপ্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে তার কাজ করার সুযোগ বা যোগ্যতা আছে, তা আগে ঠিক করতে হবে। একই সঙ্গে প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠান ও পদের বিপরীতে কী গুণাবলি প্রয়োজন সেসব বিষয়ে ধারণা নিতে হবে। এর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে।

{মনজুলা মোরশেদ, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসার, বাংলালিংক}

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...