প্রশাসনিক জটিলতায় বেরোবি ছাড়ছেন সোমালিয়ান ৪শিক্ষার্থী

somalian-4-student

পিবিএ,বেরোবি: উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় গত ডিসেম্বর মাসে আফ্রিকার সোমালিয়া থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেছেন ৪শিক্ষার্থী। তারা হলেন, আহমেদ মুহাম্মদ (রাস্ট্রবিজ্ঞান, মাস্টার্স), শাফি আহমেদ (সিএসই, অনার্স),আব্দুল ফাতাহ (সিএসই, অনার্স) ও আব্দুর রহমান (ফিন্যান্স, বিবিএ)। স্কলারশীপ হিসেবে টিউশন ফিস ও আবাসিক সুবিধা পাবার শর্তে প্রায় ৫ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনও ভর্তি হতে পারেনি তারা। আর, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা না থাকায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমালিয়ানরা।
জানা যায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসেন সোমালিয়ান এই চার শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে বেরোবি উপাচার্যের অনুরোধে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ওই মাসের শেষের দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে রংপুরে আসেন তারা। পরে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নং কক্ষে অবস্থান করতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা ক্যাম্পাসে আসার ৫ মাস অতিক্রম করতে চললেও এখনও তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
৫ মাস পরেও ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় গত তিনদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়াকে সাথে নিয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাত করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে আসা সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আহমেদ মুহাম্মদ। সেখানে তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না বলে পরিস্কার জানিয়ে দেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ মুহাম্মদ বলেন, আমি তার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অথচ আমাদেরকে স্কলারশীপসহ পড়াশুনা করার সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। গত ৫ মাসেও আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। আর, তিনি এখন বলছেন আমাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না। তাই রমজানের আগে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি সাক্ষাত করতে গেলে ভাইস চ্যান্সেলর আমার সাথে পশুর মত আচরণ করেন এবং তার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে আমি উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু, সেখানে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। উপাচার্য তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন। তুষার কিবরিয়া বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে এধরনের আচরণ করা দুঃখজনক। এধরনের কর্মকান্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নং রুমে গিয়ে দেখা যায়, ওই রুমে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বিদেশি চার শিক্ষার্থী। রুমটিতে কোনো সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। রুমের সামনে ময়লার স্তুপ ও জঙ্গল। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মশায় পূর্ণ হয়ে উঠে রুমটি। এছাড়া, রমটি বেসিন, বাথরুম ও টয়লটের সাথে লাগানো। প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ আসছে সেখানে। অপর শিক্ষার্থী শাফি আহমেদ বলেন, আমাদেরকে যে রুমে রাখা হয়েছে সে রুমে পশুকেও রাখা হয়না। আমরা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেছিলাম। পরে অনুরোধ করে আমাদেরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। আসার পাঁচ মাস পরেও আমাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। এমনকি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। ইতোমধ্যে কিছু করতে পারবেন না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট , জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান বলেন, তাদের ভর্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স না আসায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। আবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার চেষ্ট চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এটি একাডেমিক বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বিষয়টি দেখবে। এবিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পিবিএ/এসএইচ/হক

আরও পড়ুন...