পিবিএ, ঢামেক : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাগাশুসরা গ্রামের দুবাই প্রবাসী এখলাস মিয়ার মেয়ে হাবিবা আক্তারের (১৮) দূরস্পর্কের এক আত্মীয় কসমেটিক ব্যবসায়ী মমিন মিয়ার (২২) সাথে বিয়ের কথা ঠিক হয়। বিয়ের কাবিননামা বাকী থাকলেও মওলানা দিয়ে কবুল পড়ানো হয় তাদের। এরপর থেকেই নিয়মিতই তাদের বাসায় যাতায়াত করতো মমিন। এর ৩-৪ মাস পর থেকে তাদের সাথে আর বনিবনা হচ্ছিল না মমিনের। তাদের বাসায়ও যাতায়াত বন্ধ করে দেয় সে। পরে এই মাসেরই ১২ জানুয়ারী কোর্টের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু বিচ্ছেদ করেও রক্ষা মেলেনি হাবিবার। তার মুখ এসিডে ঝলসে দিয়েছে তার সাবেক স্বামী মমিন। ঘটনার পর থেকে ঘাতক মমিন পলাতক রয়েছে।
বিচ্ছেদের পর আবার হাবিবার অন্যত্র বিয়োর কথাবার্তা চলছিলো। হাবিবার অন্যত্র বিয়ের কথা শুনেই মাথা খারাপ হয়ে যায় মমিনের। এর রেশ ধরেই গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে হাবিবার রুমের দরজা খুলে ঘুমন্ত হাবিবার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে মমিন। পরে হাবিবার আর্তচিৎকারে সবাই জেগে ওঠার আগেই পালিয়ে যায় সে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এসিড দগ্ধ হাবিবা। এসিডে ঝলসে গেছে তার পুরো মুখমণ্ডল ও গলার গলার কিছু অংশ। অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালেই দিন কাটছে তার। একই ঘটনায় হাবিবার পাশে শুয়ে থাকা চাচাতো বোন আয়শাও (১২) দগ্ধ হয়। তার বাম হাতের কনুইতে ও আরো দুএক জায়গায় সামন্য দগ্ধ হয়েছে।
সোমবার ঢামেক বার্ন ইউনিটে কথা হয় দগ্ধ হাবিবা ও তার মা সাফিয়া আক্তারের সাথে। মা সাফিয়া আক্তার বলেন, বছর খানেক আগে হাবিবার খালাতো বোনের দেবর মমিন মিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ের সম্বন্ধ করা হয় হাবিবার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার মৃত সায়েব আলির ছেলে মমিন। পেশায় কসমেটিক ব্যবসায়ী মমিন এরপর থেকেই তাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতো। ৩/৪ মাস ভালো থাকার পর মমিনের আচরনে পরিবর্তন আসে। হাবিবাদের বাড়িতে আসাও বন্ধ করে দেয় সে।
এরপর তাকে তুলে নেওয়ার কথা বললেও সে এড়িয়ে যায়। সর্বশেষ একটি সমাধানের জন্য কোর্টের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
হাবিবার মা সাফিয়া আক্তারের অভিযোগ, যখন তাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন আবার এলাকারই এক ছেলের সাথে বিয়ের কথা হয় হাবিবার। হাবিবার আবার অন্যত্র বিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় মমিন। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে যখন চাচতো বোন সহ ৪ বোন মিল রুমে ঘুমিয়েছিলো তখন মমিন কৌশলে তার রুমের দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে হাবিবাকে সনাক্ত করে তার মুখে এসিড ছুড়ে রুমের লাইট বন্ধ করে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
দগ্ধ হাবিবা বলেন, ‘রাতে যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন রুমের লাইট জ্বলছিলো। ঘুমন্ত অবস্থাতে মুখে হঠাৎ আগুনের মত জ্বালাপুড়া করতে থাকে। চোখ খুলতেই দেখি মমিন রুমের লাইট বন্ধ করে দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।’
এই ঘটনার পর হাবিবাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে সিলেট মেডিকেলে ও পরে গতকাল শনিবার সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে বার্ন ইউনিটের ৫১৯ নম্বর রুমের ৬ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন রয়েছে সে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাবিবার মুখমণ্ডল ও গলার কিছু অংশসহ ৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।
পিবিএ/জিজি