শফিকুল ইসলাম খোকন: একটি প্রচলিত কথা দিয়ে এ লেখাটি শুরু করছি, সেটি হলোণ্ড ‘‘একটি বহুতল ভবন তৈরী করতে হলে ভিত মজবুত করতে হয়’’তেমনি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে টেকসই বা মজবুত হতে হলে আগে গণতন্ত্রের মুল মন্ত্র বা ভিত মজবুত করতে হবে অর্থাৎ গণতন্ত্রের মুল মন্ত্র বা গণতন্ত্র বলতে যা বুঝায় সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই একটি রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে বাধ্য। আর সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যে কয়টি খুটির উপরে দাঁড়িয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম খুটি হচ্ছে গণমাধ্যম।
দেশের উন্নয়নকে টেকসই, গতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক করতে অবাধ তথ্যপ্রবাহের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার অনুসৃত এ অন্যতম মূলমন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করার দৃঢ়প্রত্যয় সে কাজেরই অংশ। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের কার্যকর ভূমিকায় দেশের সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা কর্তৃক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ফলে জনগণ একদিকে উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে আরও সচেতন হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে সরকারও অবহিত হচ্ছে। এ ছাড়া হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করে সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আরও সচেতন হচ্ছেন। পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করায় সাংবাদিকদের উৎসাহ বাড়াচ্ছে প্রেস কাউন্সিল।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও মানোন্নয়নে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এখন আগের তুলনায় অনেক গতিশীল এবং দায়িত্বশীল হয়েছে। হলুদ সাংবাদিকতা রোধে প্রেস কাউন্সিলে দায়েরকৃত মামলাগুলো অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করে বিচারপ্রার্থীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের প্রেস কাউন্সিল আন্তর্জাতিকভাবেও যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষা করে চলেছে। ভারত ও নেপালের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণ সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলসের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
আমরা কথায় বলে থাকি “সাংবাদিকরা চতূর্থ রাষ্ট্র; সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, জাতির আয়না, দর্পন” ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করছে’ ইত্যাদি। আর এই সংবাদিকরাই সংবাদপত্র বা কোন গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। একজন সংবাদকর্মী থেকে একজন সাংবাদিক; সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের সাথে আমরা সকলেই পরিরিচত। সংবাদ পত্র হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পন। সংবাদপত্র থেকে জাতি তথা রাষ্ট্র উপকৃতই হয়। সংবাদপত্র যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে, তার অবাদ বিচরণ ও স¦াধীনতাও যেমন থাকা দরকার দায়িত্বশীলতাও রয়েছে। সংবাদপত্র নৈতিকতার চর্চা করে। বিবেকের শাসন করে। সমাজ তথা রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথায় কীভাবে নৈতিকতার স্খলন হচ্ছে সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় গণমাধ্যম।
আগেই বলেছি, গণমাধ্যম দেশের গণতন্ত্রের খুটির অন্যতম একটি। ভবনের প্রয়োজনীয় একটি খুটি না থাকলে যেমন ভবনটি নড়বড়ে হওয়ার পর স্থায়ীত্ব থাকে না, ঠিক তেমনি একটি দেশে ‘গণমাধ্যম’ নামক খুটি যদি নড়বড়ে থাকে, তাহলে গণতন্ত্রও প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। এ কারণেই গণমাধ্যম যেমন থাকার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি এ খুটির দায়িত্বও রয়েছে অনেক। দায়িত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চিন্তা এবং বিবেকের স্বাধীনতা দান করা হইল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে- প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
গণমাধ্যম কর্মীদের বা সাংবাদিকদের সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। যার মধ্যে প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টাস ইউনিটসহ বিভিন্ন নামে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে ‘প্রেস ইনস্টিটিউট’ নামে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠন। এর পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মী বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনায়নের জন্য ‘প্রেস কাউন্সিল’ নামে আরও একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মনে করেন সংবাদ তাদের বিরুদ্ধে প্রচার বা প্রকাশিত হয়েছে তারা সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম বা গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘প্রেস কাউন্সিল’ এ অভিযোগ করতে পারেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন বা বিধিও রয়েছে। সাংবাদিকরা যদি তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনও ধরনের নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন তাহলেও তারা প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সনে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গেজেট প্রকাশের দিনটিকে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে। ২০১৭ সাল থেকে ১৪ ফেরুুয়ারি ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ হিসেবে পালন করা শুরু করে। সাংবাদিকরা সব সময়ই দেশ ও দশের কথা প্রকাশ করে। সমস্যাণ্ডসম্ভাবনা, দুর্নীতিণ্ডঅনিয়ম গণামধ্যমের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নিয়ে গণমাধ্যমে তেমন কোন সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়না। ২০১৭ সালে এসে ১৪ ফেরুুয়ারি ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ পালন করা শুরু করে আর ৩ মে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ নিয়ে নামমাত্র লেখালেখি হয়। কিন্তু সেটিও আশানুরুপ নয়; আমি মনে করিণ্ড সারা বছরই সাংবাদিকরা লেখেন জাতির স¦ার্থে। অন্তত বছরের এ দুটি দিন শুধুমাত্র সাংবাদিকদের জন্য উম্মুক্ত করা হোক এবং জেলা উপজেলায় না হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে সাংবাদিকদের মহা সমাবেশ ঘটনো হোক। যেটি হতে পারে সাংবাদিকদের মহামিলন এবং একে অপরের প্রতি আত্মার সম্পর্কের একটি অধ্যায়; সেটির বড় ভুমিকা রাখতে পারেন সম্পাদক, গণমাধ্যমের মালিক পক্ষ প্রেস কাউন্সিল বা প্রেস ইনস্টিটিউট।
সংবিধানের ২ উপধারাটিকে বিশ্লেষনের দিকে দেখা যায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও এখানেও কিছু শর্ত মানতে হবে। সেগুলো হলো- এমন কিছু সংবাদ মাধ্যমে আসতে পারবে না; যার জন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এমন কিছু প্রকাশ করা যাবে না; যার জন্য বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়- এমন তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। অশালীন এবং অনৈতিক কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না, সবসময় আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং এমন কিছু প্রকাশ করা যাবে না, যার জন্য কেউ অপরাধ করার জন্য প্ররোচিত হতে পারে। এসব শর্ত মেনে নিয়েই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়ে থাকে। এসব শর্তের লঙ্ঘন হলে আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ সংবিধানের এ ধারাটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পেছনে গভীর তাৎপর্য বহন করে। কারণ বাংলাদেশে এখন যতটুকু স্বাধীনতা বিদ্যমান, তার প্রায় পুরোটাই সম্ভব হয়েছে সংবিধানে এ ধারাটি যোগ করে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে যেমন মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে; তেমনি গোপনীয়তার অধিকারের কথাও বলা হয়েছে। মত প্রকাশ করতে গিয়ে এমন কিছু করা উচিত নয়; যার জন্য একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। জানার অধিকার এবং গোপনীয়তার অধিকারের মধ্যে সবসময় একটি ভারসাম্য রেখে চলতে হয়।
গণমাধ্যমের দেখভাল করার জন্য দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘প্রেস কাউন্সিল’। প্রশ্নও আসতে পারে ‘প্রেস কাউন্সিল’ গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যপারে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে বা করেছে? যাক এ প্রশ্নের উত্তরটি আপাতত খোজার ইচ্ছা নেই; তবে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে গণমাধ্যকর্মীদের অধিকার চাইতে পারি প্রেস কাউন্সিলের কাছে। প্রেস কাউন্সিল আর গণমাধ্যম বা গণমাধ্যকর্মীদের সাথে সম্পর্কটা থাকা উচিত ভালো, যেটি হবে সাংবাদিক তৈরী করার একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে একে অপরের সাথে সৌহার্দপুর্ণ সম্পর্ক এবং বিপদেণ্ডআপদে একে অপরের পাশে থাকবে। প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর ১১ নম্বর ধারায় কাউন্সিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাসমূহের মান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা’। কার্যাবলীতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাসমূহের স্বাধীনতা সংরক্ষণে সহায়তা করা; সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা এবং সাংবাদিকদের রুচি বা পছন্দের উচ্চমান সংরক্ষণ নিশ্চিত করা; প্রেস কাউন্সিল বিগত বছরে এমন কাজ কতটা করেছে? আমার মনে হয় বিগত বছরে প্রেস কাউন্সিল তাদের আইন অনুযায়ী শতভাগ কাজ করতে না পারলেও আশানুরুপ কাজ করেছেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়ণ্ড বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে রয়েছে। যার মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমও রয়েছে এগিয়ে। প্রেস কাউন্সিল আইনে অনলাইন বিযষও অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজনীয়তা যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি প্রেসকাউন্সিল প্রতি বছর প্র্রেসকাউন্সিল দিবসে সাংবাদিকদের সম্মাননা দেন তাতেও তাদের অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকদেরও এর আওতায় আনা উচিত।
৬ ফেরুয়ারি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সাংবাদিকরা দায়িত্ববোধ থেকে বিবেকের তাগিদে দেশের জন্য কাজ করছে, মানবতার কাজ করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করছে। রাষ্ট্র যতদিন থাকবে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকতাও থাকবে।’ আমি তার কথায় সম্পুর্ণ একমত, কিন্তু প্রেসকাউন্সিল কতটুকু সাংবাদিকদের জন্য এগিয়ে আসছেন? হ্যা, যতটুকু আসছেন তাতে আশানুরুপ নয় বলে আমি মনে করি। কারণ সাংবাদিকরা অন্যের ঢোল পিটায় কিন্তু নিজের ঢোল পিটাতে পারেনা। আমরা দেখছি, সংবাদপত্র, টিভি ও অনলাইন গণমাধ্যমে সাহিত্যিক, ফিচার,শোবিজ, প্রযুক্তি, ফ্যাশন ইত্যাদি পাতা থাকে কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য কোন পাতা দেখা যায়না। প্রেসকাউন্সিল এমন একটি উদ্যোগ নিবেন যাতে করে যারা অন্যের জন্য ঢোল বাজায় তাদের জন্য প্রতিটি গণমাধ্যমে অবদান, সফতলা নিয়ে আলাদা বিভাগ বা পাতা করা হোক।
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে দেশের প্রতিও। আর সেই দায়িত্ববোধের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী এবং ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই সারাদেশের সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন ও সংরক্ষনের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, এটি প্রশংসনীয়। আইনের পাশাপাশি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যও উদ্যোগি হয়ে দায়িত্ব নেয়া উচিত প্রেস কাউন্সিলকে। অনেক বছর পর হলেও ২০১৭ সাল থেকে প্রেস কাউন্সিল প্রতি বছর যে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ পালন করছে। পাশাপাশি ‘প্রেস কাউন্সিল দিবস’ এ ৪ ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করছে। প্রতি বছর দিবস আর দিবসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করা সত্যিকার অর্থে যেমন প্রশংসনীয় তেমনি সাংবাদিকদের কাজের গতি বাড়িয়ে দেওয়া এবং দায়িত্বশীল হওয়ার একটি সুগম পথ; পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিল এবং সাংবাদিক দুটো একই প্রাণের দুটি ডানা। যেহেতু তথ্য প্রযুক্তির যুগে এখন গণমাধ্যমও এগিয়ে, তাই প্রান্তিক জনপদের মানবিক স্টোরি, ফিচার, প্রান্তিক জনপদের সফলতা, উদ্যোক্ততাদের নিয়ে লেখা সাংবাদিকদের প্রতিযোগিতার আওতায় আনা উচিত। তাছাড়া এখন প্রান্তিক জনপদে অনেক মেধাবি সাংবাদিক, লেখক, গবেষক রয়েছেন যারা প্রতিনিয়তই জাতির জন্য ভালো কিছু লেখালেখি করছেন তাদেরকেও বিশেষ ক্যাটাগরিতে এ প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত। তারা সব সময়ই মিডিয়ার অন্তরালে থাকে। আমি মনে করি, একটি স¦াধীন রাষ্ট্রের প্রতি গণমাধ্যমের দায়িত্ব আর প্রেস কাউন্সিলের দায়িত্ব হওয়া উচিত পরিপুরক। সাংবাদিকদের প্রতি প্রেস কাউন্সিলের ভুমিকা থাকাটাও উচিত প্রশংসনীয় পর্যায়। ভবিষ্যতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অভিভাবক হিসাবে প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সাংবাদিক উৎসাহের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করবে বলে আশা করছি।
সর্বপরি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে সঠিক পথে চালাতে হলে শুধু যে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব তা নয়, এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। এ কারণে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব যেমন পাঠক, সচেতনসহ আপমর জনসাধারণ তেমনি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। সাংবাদিকরা কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করলে পৃথিবীর অবস্থা আরো খারাপ হতো। এক্ষেত্রে তরুণ ও উদীয়মান সাংবাদিকদের মেধা, বিদ্যা-বুদ্ধি সততা এবং যোগ্যতার মাধ্যমে দেশ সেবায় দক্ষতার পরিচয় রাখতে হবে। সরকারকেও সংবাদপত্র তথা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবহেলা আর দায়সারা নয়, নিজের দায়বদ্ধতা থেকে দায়িত্ব নিয়ে শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাইণ্ড স¦াধীন বাংলাদেশটির সুনাম রক্ষা করা যেমন নাগরিক হিসেবে সকলের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি গণমাধ্যম, প্রেস কাউন্সিল বা প্রেস ইনস্টিটিউটেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাই গণমাধ্যম, প্রেস কাউন্সিল এবং প্রেস ইনস্টিটিউটের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগে একটি টেকশই বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করা কোন ব্যপারই না। তাই এ সকল প্রতিষ্ঠান তাদের সুনাম রক্ষা এবং দেশের সুনাম রক্ষার জন্য উদ্যোগি হয়ে কাজ করবে এবং প্রেস কাউন্সিলই হোক সাংবাদিক তৈরীর প্রতিষ্ঠান এটাই কামনা করছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকতে এটাই অঙ্গীকার হোক, বঙ্গবন্ধু যে স¦প্ন নিয়ে ১৯৭৪ সালে প্রেসকাউন্সিল গঠন করেছিলেন, সেটিই বাস্তবায়ন করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক