প্রোগ্রামার-উপসচিব পরিচয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৪ কোটি টাকা

পিবিএ,ঢাকা: শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার ও উপ সচিব পরিচয়ে অনিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার আশ্বাসে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। এমনই এক চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই এর তথ্য মতে, অনিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনা ও লাইব্রেরিয়ান নিয়োগেসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা বলে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

রবিবার (১৮ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁও ৬০ ফিট ঢাকা-মেট্রো উত্তরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে ‘ভুয়া উপসচিব ও সহকারী সচিব পরিচয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ২ প্রতারক গ্রেফতার প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. আসাদুজ্জামান মানিক ও লুৎফর রহমান (৪৭)।

জাহাঙ্গীর আলম, আমরা দুইজন প্রতারককে গ্রেফতার করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অফিসার পরিচয় দিয়ে ছদ্মনামে তারা প্রতারণা করে বেড়াতো। এদের একজনের নাম আসাদুজ্জামান মানিক। সে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা মাধ্যমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং রংপুরের আরেকজন প্রতারক আব্দুল গফফার। তিনি রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে প্রভাসক থেকে অবসরে আসেন। ২০১৯ সালে আসাদুজ্জামান মানিকের সাথে তার পরিচয় হয়। তাদের পরিচয় সূত্র ধরে তারা ছক আঁকে।

এরপর বয়স্ক ব্যক্তি তিনি সুট টাই পড়ে ভুয়া উপসচিব সেজে ঘুরে বেড়াই। আর আসাদুজ্জামান মানিক প্রোগ্রাম অফিসার সাজেন। এরা বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখেন যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও ভুক্তির পেন্ডিং আছে, লাইব্রেরিয়ান বা বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া দরকার সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের নাম্বার জোগাড় করে ফোন দেয়। তারা অনেকের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করে পরবর্তীতে তারা ভোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ স্থাপন করতে সফল হয়। পরে তারা ঢাকায় চলে আসে এবং তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সচিবালয়ের অপরদিকে তারা অবস্থান নিয়ে প্রচারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের সঙ্গে দেখা করে। এরপর তাদেরকে বলে ১২ লক্ষ টাকা দিতে হবে।

এই টাকা দিলে তারা তাদের কাজ করে দেবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতারিত রাত ৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা তাদেরকে দেয়। পরবর্তীতে তারা বিভিন্নভাবে বিকাশ নগদের মাধ্যমে বাকি টাকা নেয়। টাকা দেয়ার পরেও যখন তাদের কাজ হচ্ছিল না তখন তারা একটু খোঁজখবর নেয়। তারপর তারা অধিদপ্তরের খোঁজখবর নিলে পারে জানতে পারে এই নামে কেউ নেই।

শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের একটা অভিযোগ নিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে দেখতে পাই যে ঘটনাটি সত্যি। পরে ভিকটিমরা মামলা দায়ের করলে আমরা সেই মামলার সূত্র ধরে একজনকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে এবং আরেকজন যে উপসচিব পরিচয় দেয় তাকে উত্তরা একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, এই দুই প্রতারক ২০১৯ সাল থেকে গোপনে এই প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন। আমরা তাদের এখন পর্যন্ত বিকাশ বা নগদের লেনদেনের যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে মোট ৪ কোটি ১লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা লেনদেন করেছে।

এখন পর্যন্ত তাদের মাধ্যমে প্রতারিত অনেক ভিকটিম আমাদের কাছ আসছে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করব। বর্তমানে আমরা তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।

পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আসামীরা পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসা বরগুনা হতে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট হতে ৮৫ হাজার টাকা, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদ্রাসা হতে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হতে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা সহ আরও অন্যান্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসামীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন বিকাশ ও নগদ নম্বরে সর্বমোট ৪ কোটি ১লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন...