ফণী’র তান্ডবে লন্ডভন্ড চাঁদপুরের কয়েকটি উপজেলা

পিবিএ,চাঁদপুর: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে চাঁদপুরের কয়েকটি উপজেলায় ব্যাপক ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে চরাঞ্চলে প্রায় শতাধিক বসত ঘর ও গাছলপালা ভেঙে লন্ডভন্ড হয়েগেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ছিন্নমূলদের বেশ কয়েকটি ঘর। তবে এই ঘটনায় কেউ হাতহত হয়নি।
এ ছাড়াও হাজীগঞ্জ উপজেলার ৯নং উত্তর ও ১০নং দক্ষিণ গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে কয়েকটি আধা পাকা ঘর, দেশগাঁ ডিগ্রী কলেজের আধাপাকা ২টি ভবন, দেশগাঁও হাই স্কুলের একটি ও দেশগাঁও প্রাইমারী স্কুলের ১টি টিনসেড ভবন উড়ে গেছে।


শনিবার (৪ মে) আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার রাজরাজেশ^র ইউনিয়নের শিলারচর, খাসকান্দি, মান্দের বাজার গ্রামে প্রচন্ড গতির ঝড়ো হাওয়ায় বসতবাড়ীগুলো ভেঙে পড়ে ও গাছপালা তছনছ হয়ে যায়।
রাত সাড়ে ৩টায় সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দয়া ফেরিঘাট এলাকায় গাছ ভেঙে ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৪টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
রাজরাজেশ^র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, শিলারচরসহ কয়েকটি গ্রামে ঘর বাড়ী ভাঙলেও কোন ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কারণ ইউনিয়নের অধিকাংশ বাসিন্দাদেরকে শুক্রবার সন্ধ্যার পূর্বে নিরাপদ আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার রাঢ়ী জানান, তার ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মৃত ছাত্তার সরদারের স্ত্রী ভুলো বেগম, ছিন্নমূূল পরিবারের শামছুন্নাহার, কুলসুমা বেগম ও মাজুদা বেগমের বসত ঘর ভেঙে তছনছ হয়েগেছে। ক্ষতির বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

এদিকে জেলার মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর ইউনিয়নের চরউম্মেদসহ কয়েকটি চরাঞ্চলে প্রায় ৪০টি বসতঘর ভেঙে লন্ড ভন্ড হয়েগেছে।

এখলাছপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুছাদ্দেক হোসেন মুরাদ বলেন, আমার ইউনিয়নের বোরোচর এলাকায় রাতে ঝড়-তুফানে অনেক ঘর-বাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। নির্দিষ্ট ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারছি না, তবে তালিকা করছি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

হাজীগঞ্জের ৯নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে গন্ধর্ব্যপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিন সেড ভবন উড়েগেছে। ১০নং দক্ষিণ গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মুজিবুর রহমান স্বপনের বসত ঘর, বাবুল, নুরুল ইসলাম কয়েকটি আধা পাকা ঘর, ৭নং ওয়ার্ডের দেশগাঁ ডিগ্রী কলেজের আধাপাকা ২টি ভবন, দেশগাঁও হাই স্কুলের একটি ও দেশগাঁও প্রাইমারী স্কুলের ১টি টিনসেড ভবন, মজিবুর রহমানের বসত ঘর, কবির হোসেনের বসত ঘর উড়ে গেছে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বৈশাখী বড়ুয়া জানান, হাজীগঞ্জে যেসব বাড়ী ঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে রিপোর্ট প্রেরণ করা হচ্ছে। তাদেরকে দ্রুত ত্রাণ প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার একটি তালিকাও তৈরী করে প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
অপরদিকে চাঁদপুরে শুক্রবার রাত পৌনে ৩টার দিকে প্রচন্ড গতিতে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি না হলেও বাতাসের গতি কমেনি। মেঘনা নদী উত্তাল রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে চরাঞ্চলের সাড়ে ৫হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার থেকে চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুটের সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর হরিণা ফেরিঘাট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে। চরাঞ্চল থেকে ৫হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

পিবিএ/এমএ/হক

আরও পড়ুন...