ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী রাফিকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি

 

পিবিএ,ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজী পরিক্ষা কেন্দ্রে আগুনে ঝলসে দেওয়া মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। আজ বেলা তিনটার দিকে তাকে ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।

ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাক্তার সামন্ত লাল সেন পিবিএ;কে জানান, মাদ্রাসা ছাত্রী রাফির শরীরের পা থেকে গলা পর্যন্ত ৭০ শতাংশেরর বেশী দগ্ধ হয়েছে। তবে তার শ্বাসনালী দগ্ধ হয়নি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বার্ন ইউনিটের হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে।

ফেনী সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের মাওলানা একেএম মুসা মানিক এর মেয়ে নুসরাত জাহান রাফি। মা শিরিন আক্তার। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রাফি তৃতীয়। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী সে।

একই মাদ্রাসার ১০ শ্রেণির ছাত্র রাফির ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান জানায়, যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলার জেরে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজউদ্দৌলার পক্ষের কয়েকজন ছাত্রী তার বোন রাফিকে মাদ্রাসার ৩য় তলার ছাদে ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার ডাক চিৎকার শুনে মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীরা ছাদে থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।

দগ্ধ ছাত্রী রাফির বরাত দিয়ে ছোট ভাই বলেন, গত ২৭ মার্চ সকাল পৌনে ১২ টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে রাফিকে অধ্যক্ষের রুমে ডেকে নেয়। তখন রাফি তার সঙ্গে আরও ৩/৪ জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে বান্ধবীদের না ঢুকিয়ে শুধু রাফিকে ভিতরে ঢুকান। এরপর দরজা আটকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা রাফিকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। ১লা এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আধাঘন্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেয়া হবে, যদি সে অধ্যক্ষর কুপ্রস্তাবে রাজি হয়।

 

এরপরই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা রাফির শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তির পর রাফি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে যায়। এরপর মাদ্রাসায় থাকা ছোট ভাই রায়হানকে খবর দেওয়া হলে সে রাফির কাছে যায়। এরপর অধ্যক্ষ তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। অসুস্থ থাকার কারণে অধ্যক্ষর কাছে এসেছিলো ছুটির আবেদন করতে। এখানে এসে আবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে পরে।

সেখান থেকে রাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে রাফি, স্বজনদের জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেছিল। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে ফোন দেয়। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যায়। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ উল্টো অধ্যক্ষকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরের দিন তাকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায়।

ছোটভাই আরো বলেন, আজ আরবি ১ম পত্র পরিক্ষা ছিলো রাফির। সকালে মাদ্রাসায় গেলে এক ছাত্রী তাকে বলে যে, রাফির বান্ধবী নিশাতকে কারা যেনো ছাদে মারধর করছে। পরে রাফি মাদ্রাসার ৩য় তলার ছাদে গেলে সেখানে বোরখাপড়া, হাতে মোজা লাগানো ৪ ছাত্রী তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। বলে, মামলা তুলে না নিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। এরপর রাফি মামলা তুলে নেবার কথা অস্বীকার করে তার বিচার দাবি করে। পরে ওই ৪ জন তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়।

পিবিএ/এইচএ/হক

আরও পড়ুন...