ফের রাজপথে আন্দোলনে যাচ্ছে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের লাখো শিক্ষার্থী

ফাইল ফটো

পিবিএ,রিপোর্ট: ঢাবি অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা আবারে ফুঁসে উঠছে। বারবার রাজপথে আন্দোলন করে দাবি আদায় না হওয়ার কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না একটি দাবিও। ফলে বছরের পর বছর সেশন জটের কবলে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঢাবি কর্তৃপক্ষ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলছে। এতে করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পুড়ছে ক্ষোভের আগুনে। এই ক্ষোভ থেকে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশংকা করছে ভুক্তভোগিসহ সকল সচেতন মহল।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ২ মে তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইডে অধিভুক্ত সরকারি বাংলা কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩য় বর্ষের ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ফলাফল প্রকাশ করে । ফলাফলে দেখা যায় ২১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজনও পাশ করেনি। গড়ে সবাইকে একই বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। এমন ফলাফল পেয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দেয়। তারা এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ফল প্রকাশের দাবি জানায়। তা না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনের হুমকি দেয় শিক্ষার্থীরা।

ফাইল ফটো

উল্লেখ্য ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পেরে সোমবার সকালে তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইড থেকে ফলাফল প্রত্যাহার করে নেয়। সচেতন মহলের বক্তব্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কেন বারবার লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে খেলছে তা তাদের বোধগম্য নয়। সরকারের তরফ থেকে বারবার সমস্যা সমাধানের কথা বলা হলেও আদৌ তার সমাধান হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭টি কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ । বিষয়টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের কর্তৃপক্ষের কাছে ডোন্টকেয়ার ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সরকারি বাংলা কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থপনা বিভাগের ৩য় বর্ষে ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ২১৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে সবাইকে একই বিষয়ে ফেল করানো।

শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের অভিমত, একটা স্বনামধন্য সরকারি কলেজের সকল পরীক্ষার্থী একযোগে কখনই ফেল করতে পারে না । এটা অসম্ভব ও ভূতুরে ব্যাপার। উল্লেখিত ২১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজনও কি লেখাপড়া করেনি ? কিংবা তাদের কলেজের বিভাগীয় শিক্ষকেরা কি কিছুই পড়াননি! অথবা তারা নিজেরাও কিছু জানেন না ?

ফাইল ফটো

সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষক পিবিএ’কে জানান, যোগ্যতার মাপকাঠি বিবেচনা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের চেয়ে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক কোন অংশেই কম নয় । বরং সরকারি কলেজের একজন শিক্ষককে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষক হতে হয় । তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা কোথায় ? এভাবে বারবার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া তাদের কি ঠিক হচ্ছে ? ঢাবি অধিভুক্ত ৭টি সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, একদিকে সঠিক সময় পরীক্ষা না নেয়া, বারবার পরীক্ষার্থীদের গণহারে ফেল করানোর ফলে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে তাদের শিক্ষা জীবন থেকে। লেখাপড়া শেষ কবে হবে তা আমাদের জানা নেই। বারবার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে পুলিশ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের হাতে লাঞ্চনার শিকার হয়েও কার্যকরী ফল আসছে না । ফলে আমরা চরম হতাশার মধ্যে শিক্ষা জীবন পার করছি।

উল্লেখ্য, গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় সড়ক অবরোধ করে । দাবিগুলোর অন্যতম ছিলো গণহারে ফেলের কারণ জানানো ও খাতা পুন:মূল্যায়ন করা । ইতিপূর্বেও আরো একাধিকবার একই বিষয় নিয়ে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে রাজপথে নেমে ৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে। বারবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নানা আশ্বাস দিলেও তার একটিও অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি ।

উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজধানীর ৭টি সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে সরকারি এ কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়। লক্ষ ও উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার মানোন্নয়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ঢাবি ভিসির দপ্তর সংলগ্ন লাউঞ্জে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অধিভুক্ত করা হয়।

এ সময় অধিভুক্ত সাতটি কলেজের অধ্যক্ষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড.নাসরীন আহমাদ।

পিবিএ/এইচটি/আরআই

আরও পড়ুন...