পিবিএ ঢাকা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেওয়া ও কথা কাটাকাটির জেরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে । পরে দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সুমনা ক্লিনিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের ফারজানা নামে এক নারী কর্মীকে কয়েক দফায় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি এবং শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
জানা যায়, বুধবার রাতে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের গ্রুপের কর্মীরা সভাপতি তরিকুল ইসলামের ছবি ক্রপ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। এরপর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরাও এর বিপক্ষে ফেসবুকে পোস্ট ও কমেন্টে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বরে আসলে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের সালমান এফ রহমান,অভি, গণিত বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শান্ত, পরিসংখ্যান বিভাগের অর্পন সান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর আরো কয়েক একসাথে সভাপতি গ্রুপের কর্মী সিএসই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার শাকিল ও রনি, জিয়াদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকলে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরে সভাপতি গ্রুপের কর্মী পরিসংখ্যান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিনুন মাহফুজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বারেক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুখ শোভনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সাধারণ সম্পাদেকর কর্মীদের উপর হামলা করে।
এসময় সাধারণ সম্পাদেকর গ্রুপের কর্মী সাজ্জাদ এহসান, এ কে এম পারভেজ, নূরে আলম, নিয়াজ হৃদয় সভাপতি গ্রুপের কর্মী সোহান নাহিদ, নাফিজ কয়েকজনকে মারাত্মকভাবে আহত হয়। এই ঘটনার পর দুপুর ১২টার দিকে সাধারণ সম্পাদকের কিছু কর্মী শহীদ মিনারের পাশে অবস্থান নিলে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা তাদের ওপর আবার হামলা চালায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন শিক্ষক তাদের থামাতে গেলে তারাও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্চিত হন। এসময় দুইদিকে দুই গ্রুপে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় দুগ্রুপের কর্মীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র চাপাতি, ছুরি,রড, লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগের দুগ্রুপের এ সংঘর্ষের সময় সভাপতি গ্রুপের কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় পদাথ বিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুল ইসলাম উম্মে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকেবর গ্রুপের নারী কর্মী (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ) ফারজানা আক্তারকে দফায় দফায় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি এবং শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যারা জড়িত তারা ছাত্রলীগের কেউ না,এরা অধিকাংশ অপরিচিত। ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা এ ধরণের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন,গত বছর একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, এ বছরও এই সময়ে ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরা আসলে ছাত্রলীগের কেউ না, জাতীয় নির্বাচনের সময় এদের আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান ছিল না। এরা মূলত ক্যাম্পাসকে বারবার অস্থিতিশীল করার লক্ষে সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, উভয় পক্ষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির কারণে একটু সংঘর্ষ হয়েছে। আবার উভয় পক্ষ ভুল বুঝতে পেরে মিমাংসা হয়ে গেছে। এখন ক্যাম্পাস পুরোপুরি শান্ত।
পিবিএ/জিজি