বই উৎসবের তারিখ চূড়ান্ত হয়নি এখনো

পিবিএ, ঢাকা: ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর যাবৎ পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে সরকার তুলে দিয়েছে নতুন বই। সারাদেশে একযোগে উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ায় নতুন মাত্রা পায় দিনটি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নতুন বই সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। তবে এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সারাদেশে বিনামূল্যের বই পৌঁছলেও উৎসবের দিন চূড়ান্ত হয়নি। ফলে উৎসবটি কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জানা যায়, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি। ইতোমধ্যে সারাদেশে ৯৫ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উৎসবের প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত বই উৎসবের তারিখ ঘোষণা না করার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে বই উৎসব করা হয়। সারাদেশে একযোগে এ উৎসব পালিত হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে ওই উৎসবের আয়োজন করে। তবে এ বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে নির্ধারিত দিনে উৎসব করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করেন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে এ সময় কোনো মন্ত্রী দায়িত্বে থাকবে না। তাই কে উৎসবের উদ্বোধন করবেন, কারা অতিথি হবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে উৎসবটি পিছিয়ে যাবে। কবে নাগাদ উৎসবের আয়োজন করা হবে সে সিদ্ধান্তও নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই উৎসবের আয়োজন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে বই উৎসবের মাধ্যমে নতুন বই হাতে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও কিছুটা হতাশ। এ বছর নির্ধারিত দিন উৎসব না হওয়ার খবরে মর্মাহত হয়েছেন অনেক শিশু শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেলে বেশি ভালোলাগে। ওইদিন বই উৎসব না হলে খারাপ লাগবে।

কুর্মি টোলা হাই স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে উঠতে যাওয়া নাজমুল হক বলেন, ‘আমার সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। কয়েকদিন পরই হাতে নতুন বই পাবো। যেদিন নতুন বই হাতে পাই সেদিন অনেক ভালো লাগে। কিন্তু এবছর বই উৎসব নাকি পিছিয়ে যাবে। তাই ভালো লাগছে না।’

কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন বলেন ‘সময়মতো উৎসব হলে বেশি মজা লাগতো। উৎসবের দিন নতুন বই হাতে পেলে খুব ভালো লাগে।’

জানা যায়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পূর্বের কয়েকদিন শিক্ষকরাও ব্যস্ত থাকবেন নির্বাচনি কাজে। তাছাড়া নির্বাচনের পরের দিন বন্ধ থাকবে দেশের সকল বিদ্যালয়। তাই পহেলা জানুয়ারি জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করা কঠিন হতে পারে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বই উৎসব নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সিদ্ধান্ত হলেই বই উৎসবের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’

তবে ইতোমধ্যে সারাদেশে বিনামূল্যের প্রায় সব বই পৌঁছে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় সব বই ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। অল্প যা বাকি রয়েছে এক-দুই দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। উৎসব করার প্রাথমিক প্রস্তুতিও রয়েছে। মন্ত্রণালয় তারিখ নির্ধারণ করলেই বাকি কাজ শুরু করা হবে।’

পিবিএ/ইএইচকে

আরও পড়ুন...