রাজন্য রুহানি,জামালপুর: জামালপুরের বকশিগঞ্জ পৌর এলাকার পাখিমারা এলাকায় অবস্থিত জিগাতলা পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। এতে করে বিদ্যালয়টির চলমান সরকারি উন্নয়ন কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রমসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের জমি ও স্থাপনা রক্ষার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
লিখিত আবেদন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বকশিগঞ্জ পৌরসভায় জিগাতলা পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। স্থাপনের শুরুতে পাখিমারা সরকারবাড়ির জনহিতৈষী ও দানশীল প্রয়াত রিয়াজ উদ্দিন চরকাউরিয়া মৌজার ৪৯ শতাংশ জমি (আওআর খতিয়ান নং ২০৭, দাগ নং ১২৬১, বিআরএস খতিয়ান নং ১৬৬৮, দাগ নং ৩০৭২) বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। ওই জমিতেই বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে ৭৯ বছর ধরে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয় আসছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। যার ছাত্রছাত্রী রয়েছে ২১২ জন।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় টিনশেড ভবন থেকে পরবর্তীতে একতল পাকা ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই রয়েছে একটি ফ্লাড সেন্টার কাম ক্লাসরুম। সম্প্রতি বিদ্যালয়টির চারতলা বিশিষ্ট ভবনের বর্তমান ২,২০০ বর্গফুটের দ্বিতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প গৃহিত হয়েছে। এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় এক কোটি টাকা। বিদ্যালয়ের পুরাতন একতল ভবনটির স্থানে এই দ্বিতল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একতল ভবনটি ভেঙে চলতি নভেম্বর মাস থেকে দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে একটি মহল বিদ্যালয়ের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা দাঁড় করিয়েছে।
এই বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের পরবর্তী শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল অর্জন করে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুনামের সাথে গ্রামে এবং দেশ-বিদেশে অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, এমপি, সাবেক আইজিপি, সেনা সদস্য, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যাংকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কানাডা ও নাইজেরিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক, দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক, সরকারি-বিভিন্ন পদের চাকরিজীবী, স্বনামধন্য লেখক ও সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন), বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় বহু সংখ্যক স্বনামধন্য ব্যক্তি এই বিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন। বিদ্যালয়টি আশেপাশের অন্তত ৮টি গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এবং শিক্ষার হারও তুলনামূলক বেশি।
এদিকে ভবনের নির্মাণ কাজ ব্যহত ও বিদ্যালয় উচ্ছেদের জন্য অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়টির জমিদাতা প্রয়াত রিয়াজ উদ্দিনের ওয়ারিশ আনোয়ার হোসেন গং দানপত্র দলিল গোপন করে ওই জমি নিজেদের মালিকানা দাবি করছেন।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ ভূমির মালিকানা দাবি করে আদালতে হয়রানি ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য, ইউএনও, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ সাতজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুল কর্তৃপক্ষসহ এলাকার সচেতন মহল হতবাক হয়েছেন। মামলা মোকদ্দমার কারণে বিদ্যালয়টির উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়েছে।
পাখিমারা গ্রামের আব্দুল্লাহেল কাফিসহ অনেকেই জানান, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যালয় থেকে অসংখ্য জ্ঞানী গুণি তৈরি হয়েছে। মামলা-মোকদ্দমার জন্য বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ এবং কোমলমাতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একজন দানবীরের দান করে যাওয়া জমি তার ওয়ারিশনগণ অযৌক্তিকভাবে দাবি করছেন। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে বিদ্যালয়টি রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়টি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত। এতোদিন কোন সমস্যা না হলেও এখন বিদ্যালয়টি উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে।
বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করা রবিউল আওয়াল রবিন জানান, বিদ্যালয়ের জমিটি আমার পৈতিৃক সম্পত্তি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি নাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল জানান, আমরা সরকারি বিদ্যালয়ের জমি ও স্থাপনা রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুন মুন জাহান লিজা জানান, বাদীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যালয়ে ভবনের পুন:নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তারপরও তারা কেন এমন করছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিদ্যালয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যা যা সাপোর্ট দেওয়া দরকার সেটা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। আশাকরি শিগগিরই এর সমাধান হবে।