বগুড়ার ঔষধ বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান স্যাম্পলে সয়লাব হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে দেশের অধিকাংশ ঔষধ কোম্পানি এসব স্যাম্পল উদারচিত্তে বিলিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরাও মহা উৎসাহে সেসব গ্রহণের পর খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। মূলত ঔষধ উৎপাদনকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব ঔষধ বাজারে ছাড়ার আগে ট্রায়ালের উদ্দেশ্যে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়। বিনামূল্যে দেওয়া এসব ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই স্যাম্পল ওষুধের কেনাবেচা চলে আসছে
সোর্সের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ঔষধ বগুড়ার বাজারে বিকিকিনি হচ্ছে। বগুড়ার ঔষধের পাইকারি বাজার নামে খ্যাত খাঁন মার্কেট, মেরিনা নদী বাংলা সহ অনেক দোকানে ঝুড়ি ভরে এসব ফিজিশিয়ান স্যাম্পল প্রকাশ্যে বিক্রি করা হলেও তা প্রশাসনের নজরদারির বাইরে রয়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই কারবারের সুযোগ নিয়ে ফার্মেসি গুলোও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ “ক্যাচ কভারে” ভরে ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছে। এসব স্যাম্পল ওষুধের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব দিতে হয় না বিধায় সরকার মোটা অংকের অর্থ রাজস্ব হারাচ্ছে। সোর্স আরও জানায়, দেশের ২০টি বড় কোম্পানি প্রত্যেক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ কে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার, ৫০ টির মতো কোম্পানি ২০ থেকে ২৫ হাজার এবং ছোট ৩০ টি কোম্পানি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার প্রমোশনাল মেডিসিন চিকিৎসকদের দিয়ে থাকে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার শুধু পাইকারি ঔষধ বাজার নয়, পাইকারি বাজারের বাহিরে অসংখ্য ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে স্যাম্পল ওষুধ। এসব ওষুধের মোড়কের (প্যাকেট) গায়ে লেখা “ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ”। তবে এটা কোন সমস্যা নয় অসাধু দোকানিদের কাছে, তারা এইসব স্যাম্পল ঔষধ বিক্রির জন্য কৌশলে “ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ” ওষুধের মোড়ক পাল্টে বিক্রয়যোগ্য ওষুধের মোড়কে রেখে এসব ওষুধ বিক্রি করছে তখন বোঝার উপায় থাকে না যে এটা স্যাম্পল না মেয়াদ উত্তীর্ণ।
বগুড়ার খাঁন মার্কেট ও মেরিনা মার্কেটের বেশ কিছু ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চুক্তি থাকে চিকিৎসকদের সাথে, এতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্যাম্পল পায় চিকিৎসকরা। মূলত স্যাম্পল গুলো দেওয়া হয় রোগীদের আর ঔষধের কার্যকারিতা জানার জন্য। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকরা টাকার বিনিময়ে এসব ঔষুধ ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। বেশিরভাগ সময়ে এই ওষুধগুলো চিকিৎসকরা আমাদের মত বেশ কিছু ফার্মেসি মালিকদের তাদের বাসায় অথবা চেম্বারে ফোন করে ডেকে নেয়, আর কিছু চিকিৎসক সরাসরি আমাদের সাথে মুখোমুখি না হয়ে দালালদের মাধ্যমে আমাদের কাছে ঔষধের মান ভেদে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ কম দামে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে আমরা সেটি নিয়ে এসে “ক্যাচ কভারে” লেখা “ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ” ওষুধের মোড়ক পাল্টে বিক্রয়যোগ্য ওষুধের মোড়কে রেখে এসব ওষুধ বিক্রি করে থাকি। এই ব্যবসায় লাভের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় অনেক ব্যবসায়ী এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সুনামধন্য ঔষধ বিক্রয় বিপণন প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রতিবেদক কে জানান, হাতেগোনা কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ছাড়া শতাধিক কোম্পানি ফিজিশিয়ান স্যাম্পল সরবরাহ করে। বগুড়াতে প্রায় ৯ শতাধিক মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটি রয়েছেন তারা ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত ক্যাচ কভার (ওষুধের প্যাকেট) পেয়ে থাকেন। প্রতিটি প্যাকেটে কোম্পানি ভেদে দু্টাে থেকে চারটি করে ওষুধ থাকে। আমরা মূলত ফিজিশিয়ান স্যাম্পল দিয়ে থাকি গরিব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা ও ঔষধের গুনগত মান জানার জন্য। তবে চিকিৎসকরা ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি করে এটা আমার কখনো নজরে আসেনি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক জানান, ফার্মাসিগুলোর কোন প্রকার ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি করতে পারবে না সেটা লাইসেন্স প্রদান এর সময় শর্তে উল্লেখ থাকে। তারপরেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কাজগুলো করে থাকে। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা ঔষধের দোকান চিহ্নিত করেছি নিয়মিত ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি করে। আমরা খুব শীঘ্রই অনুমোদনহীনভাবে ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, ওষুধের ব্যবসা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সহ কঠোর ব্যবস্থা নিবো।