দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, বড় ধরনের যত দুর্নীতি হয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজগুলো যারা করেছেন তারা যেন শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান; সেটা আমরা যথাযথভাবে করার চেষ্টা করব। রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে কাজ না করি সেটা আমরা লক্ষ্য রাখব।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যোগদান শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ছিলেন।
এর আগে বিকেল ৩টার পরে আবদুল মোমেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এলে প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তার সঙ্গে নতুন দুদক কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি তিনটি রাজনৈতিক সরকার ও দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। এই অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য রাজনৈতিক দলের মতো কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নেই। রাজনৈতিক চাওয়া নেই। এই সরকারের চাওয়া হচ্ছে জনগণকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এখানে রাজনৈতিক সরকার প্রভাবিত করবে না। আমরাও প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব।
তিনি বলেন, সমাজ যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় দুদকও খানিকটা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে। আমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে, সেটাও আপনারা দেখবেন। যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ন্যায় নিষ্ঠভাবে আপনারা দেখবেন।
নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে অভিযোগগুলো আছে সেইগুলো দুদকে এসেছে ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এর ওপর বহু তদন্ত হয়েছে। ২০২৩ সালে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়নি, তার প্রত্যয়ন দুদকই করেছে। এটা কিন্তু ৫ আগস্টের পরে নয়, আরও অনেক আগে। ২০০৯ সালের তদন্ত যদি ২০২৩ সালে শেষ হয় এটাই তো হয়রানি।
দুদক হয়রানি, মামলাজট কমাতে পারবে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ শুরু করতে দিন। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করব হয়রানি কমাতে পেরেছি কিনা, তদন্তে গতি আনতে পেরেছি কিনা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পেরেছি কিনা।
মোমেন বলেন, ৫ আগস্টের বাংলাদেশ নবজন্মের বাংলাদেশ। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশের ও পূর্বের বাংলাদেশের প্রত্যাশা একরকম নয়। যে আন্দোলন থেকে নব বাংলাদেশের সৃষ্টি সেটি ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বৈষম্যের সূচনা মূলত দুর্নীতিতে। দুর্নীতি কমাতে পারলে বৈষম্য ক্রমাগত কমে যাবে। নতুন কমিশন জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে।
তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এ কাজগুলো যারা করেছেন তারা যেন শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান; সেটা আমরা যথাযথভাবে করার চেষ্টা করব। শেষ পর্যন্ত যাতে এমন না হয়, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে কাজ না করি সেটা আমরা লক্ষ্য রাখব। জনপ্রত্যাশা ও রাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা; আমরা খানিকটা হলেও তা পূরণ করতে পারব।
দুদক কমিশনার বলেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত যদি আমরা ঠিকমতো করে দিতে পারি তবেই বিচারকরা ন্যায়বিচার দিতে পারবেন। এখানে বিচারককে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। বিচারকের একক কৃতিত্ব নাই। বিচারের পেছনে তদন্ত হচ্ছে ফাউন্ডেশন। তদন্ত নিরপেক্ষ হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার আমাদের অনেক বিজ্ঞজনের মধ্য থেকে নির্বাচন করেছেন। আমাদের কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি নজরে আসলে নিঃসংকোচে বলবেন।