বনানী ফের চোখে জল আনলো

স্বজনের খোঁজে আহাজারি

মাহতাব হোসেন: চকবাজারের কান্নার দাগ হয়তো এখনো অনেকের চোখ থেকে শুকোয়নি। শুকোতে গেলে হয় উপচে আসে পানি। অ্যাকুয়াস হিউমারের এই নিত্য খেলায় যোগ হলো বনানীর নাম। গতকাল বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত নিহতের খবর পাওয়া গেছে ২৫ জনের।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অসংখ্য ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যার অধিকাংশ ছবি চোখে জল এনে দিচ্ছে। বনানীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অসহায়ত্বের একটা বড় দৃশ্য চোখে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। হয়তো তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট থাকলে এতোগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না।

চকবাজারের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের আগুন নেভানোর কিছু বিকল্প পথ বের করা দরকার ছিল। সেই অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কেন হয় নি সেটা কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে। চকবাজারে অলি-গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকে না। যার ফলে বিঘ্ন হয়েছিল আগুন নেভানোয়। সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢাকার পথেঘাটে হাইড্রেন্ট বসানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছিল। হাইড্রেন্ট হলো এক ধরনের ছোট পাইপ।

রাস্তার পাশে স্থাপন করা যায়। আশেপাশের ভবনে আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি নেওয়া যায়। ‘হাইড্রেন্ট’ যত্রতত্র পানি সরবরাহের একটি কল। চকবাজার ট্রাজেডির পর সে ঘটনা হয়তো অনেকেই ভুলে যেতে চেয়েছে। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি, ওয়াহিদ ম্যানসন ভবনের মালিক মো. হাসান উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে স্থানীয় এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীকে ‘খেয়ে ফেলার’ হুমকি দিয়েছেন। কেননা এই ফুটেজেই আগুনের সূত্রপাত পাওয়া গেছে। এর আগে ছড়ানো হয়েছিল অন্য কাহিনি।

 

গতকালও বনানীতে অবলোকন করা মানুষ ও ভবনের ভেতর আটকে থাকাদের অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে চোখেমুখে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিচে দাঁড়িয়ে কান্না কিংবা প্রার্থনা, প্রিয় মানুষটি যেন ভালোভাবে ফিরে আসে। এরকম শত শত মানুষ নিচে দাঁড়িয়ে প্রিয় মানুষের অপেক্ষায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। অজানা আশঙ্কায় বুক ভেঙে যেতে যায়। বহুতল ভবন থেকে আটকে পড়াদের নামানোর মতো প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা নেই। প্রকাশ পায় চরম অসহায়ত্ব।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর ১৭ নম্বর রোডে ২২ তলা এফআর টাওয়ারের নবম তলায় এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করে। এদের সঙ্গে যোগ দেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।

এলাকার সাধারণ মানুষও উদ্ধার কাজে অংশ নেন। উদ্ধার কাজে অংশ নেয় ৫টি হেলিকপ্টার। বালি-পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালানো হয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৬ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৫। খুব অল্প সময়েই বনানী ফের চোখে জল আনলো, কতজন হারালো স্বজন।

আরও পড়ুন...