
বরিশাল নগরে ৪ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মো. সুজন (২৫) নামের এক তরুণকে বেধড়ক পিটুনির পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরের ধান গবেষণা রোডে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে পিটুনি দেন। এরপর রাত আটটার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুজনের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ মিথ্যা; এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ে সুজনকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত সুজন নগরের ধান গবেষণা রোড এলাকার জিয়া নগরের একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। তাঁর বাবা মনির হোসেন পেশায় একজন শ্রমিক।
এদিকে সুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করে শিশুটির বাবা আজ বরিশাল কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে তাঁর শিশুকন্যাকে একটি কাজে সুজনের বাড়িতে পাঠানো হয়। তখন সুজন একা বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ওই শিশু ভেতরে প্রবেশ করতেই তাকে আটকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান সুজন। এ সময় শিশুটি চিৎকার দিলে সুজন পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় আজ শিশুটির বাবার অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত করতে ওই এলাকায় যায়। পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে স্থানীয় লোকজন সুজনকে আটক করেন। এ সময় উত্তেজিত লোকজন তাঁকে পিটুনি দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। রাত আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুজন মারা যান।
নিহত সুজনের ছোট ভাই মো. আকাশ রাতে হাসপাতালে বলেন, তাঁর ভাইকে দিয়ে এলাকার একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র মাদক বিক্রি করাত। সুজনও মাদকাসক্ত ছিলেন। মাসখানেক আগে স্বজনদের পক্ষ থেকে সুজনকে মাদক বিক্রি ও সেবন না করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমনকি তাঁকে ঘর থেকে বের হওয়াও বন্ধ করে দেয় পরিবার। এরপর সুজনকে ওই চক্র বারবার তাদের সঙ্গে কাজে যেতে তাগিদ দিলেও সুজন আর যাননি। এতে ক্ষিপ্ত হয় ওই চক্রটি।
আকাশ দাবি করেন, কয়েক দিন আগে তাঁর ভাইকে বাইরে ডেকে নিয়ে ওই চক্রের সদস্যরা মারধর করেছিল এবং তাদের সঙ্গে কাজ না করলে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এর জেরেই মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁর ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আকাশ।
হাসপাতালে থাকা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক সাহা বলেন, নিহত সুজনের লাশ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, শিশুটির বাবার করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে পিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।