মোহাম্মদ আলম : এখন বর্ষাকাল। বান আর বৃষ্টিতো আসবেই। আষাঢ়-শ্রাবন বর্ষাকাল। নীচে বন্যার জল গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়েছে। আর উপর থেকে বৃষ্টির জল যেন ঢেলে দিচ্ছে প্রকৃতি। রাজধানীর সড়কগুলোতে কয়েক ফুট পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। চট্টগ্রামেও একই পরিস্থিতি। গলাপানিতে চলাচলের যন্ত্রনায় রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের মানুষের চোখের জলে একাকার। জল আসে আসুক। এটা কোন সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান নদীগুলো ভরাট হওয়া। আর শহরে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
একটা ছোট্র ঘটনা, এক বাঙালি রাশিয়া গেছেন সরকারি সফরে। তখন রাশিয়ায় শীতকাল। সর্বনিন্ম তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি। ভদ্রলোক পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই বাঙালি পোশাকে এয়ারপোর্টে অবতরণ করলেন। বুঝতেই পারছেন তার প্রাণ বায়ু বেরোনোর উপক্রম। মুখে বলছিলেন, ‘এখানে অনেক শীতের সমস্যা।’ তখন একজন রাশিয়ান তাকে শুধরে দেন, ‘সমস্যা তোমার পোশাকে।’ তখন সেই রাশানের পরামর্শে দ্রুত তিনি একটি শীতবস্ত্র খরিদ করে রেহাই পান।
আমরা একই রকম সমস্যায় আছি। আমাদের দেশ ষঢ়ঋতুর দেশ। বর্ষা আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বর্ষা মোকাবেলার পরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকলে এমন সমস্যা হতো না।
এখন সামান্য বানের জলেই বাংলাদেশে গ্রামের পর গ্রাম ভাসে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা, শেরপুর, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকার চারপাশসহ অনেক জেলায় বন্যার জল। অপরিকল্পিত সড়ক যোগযোগ নির্মাণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকাই এর কারন। নদী ভরাট হয়ে যাওয়াও অন্যতম কারন। তাছাড়া নদী থেকে জালের মত ছড়ানো গ্রামের ভিতর দিয়ে বহমান খালগুলোও ভরাট করা হয়েছে। এখন আর নদীর পানি সেই খাল দিয়ে শিরা উপশিরার মত ছড়াতে পারে না। তাই নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করলে খুব সহজেই মানুষের বসত বাড়িতে প্রবেশ করে।
এবার দেখা যাক শহরের পরিস্থিতি। রাজধানী ঢাকার গোড়াপত্তন কয়েক’শ বছর। কয়েক লাখ মানুষ বসবাসের উপযোগী শহর। এখন সেখানে কোটির উপর মানুষ বসবাস করে। স্বাধীনতার পর থেকেই রাজধানী হিসেবে ঢাকার চাকচিক্য বেড়ে চলেছে। উপর-নীচ-ভুতলে সমান গতিতে ধাবমান সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো। তবে তার সিংহভাগই অপরিকল্পিত। রাজউক নির্মাণ বিধি আছে, তবে তা মানার কোন তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না।
দেখা গেলো রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে ২০১০ সালে। কাজ শুরু হয় আরো দুইবছর পর ২০১২ সালে। ততদিনে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। উন্নয়ন যুগোপযোগী করা হচ্ছে না। অন্ততঃ ৫০ বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এসব উন্নয়ন করতে হবে। নচেৎ এই সমস্যা প্রতিদিন বাড়তেই থাকবে।
পাহাড়ের ঢল আর বৃষ্টির জল কোন সমস্যা না। সমস্যা আমাদের ব্যবস্থাপনায়। নদীর নব্যতা ঠিক থাকলে বানের জল কোনভাবেই গ্রাম ভাসাতে পারবে না। জালের মত ছড়ানো খাল বিলে পানি বহমানের ব্যবস্থা করতে হবে। অপরদিকে নগর মহানগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিকল্পিত ভাবে উন্নয়ন করা সময়ের দাবি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হচ্ছে। সাথে সাথে পরিবেশ ও প্রতিবেশ উন্নত করা দিকেও নজর দিতে হবে।
পিবিএ/এমএ