জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা হারান এবং পালিয়ে ভারত চলে যান। হাসিনার ক্ষমতা হারানোয় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ভারত। কেননা ভারত বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র হাসিনা সরকারের সাথেই তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন করেছিল।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর এখন দিল্লি এবং ঢাকার সম্পর্ক নতুন করে পুননির্মাণ করতে হবে। খোদ ভারতেই এ নিয়ে বিস্তার আলাপ উঠেছে। দিল্লি এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে কীভাবে তারা ঢাকার সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয় করবে। বাংলাদেশের জনমনে ভারত-বিরোধীতা তুঙ্গে থাকায় দিল্লিকে এ বিষয়ে খুব সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যা হবে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে চাই। প্রতিবেশী দেশগুলোর একে অপরের নির্ভরশীলতার উপর জোর দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিস্তারিত এই সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর আরও বলেন, বাংলাদেশে যা হবে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা প্রতিবেশীর সাথে আমাদের পক্ষ থেকে সম্পর্কটাকে স্থিতিশীল রাখতে চাই। আমাদের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভালো। উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে- যেটা আমি চাই সম্পর্কটা যেন এমনই থাকে।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে জুলাই মাসে আন্দোলনে নামেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশি বাধার মুখে একসময় শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই অভ্যুত্থানে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন হাসিনা। তিনি বর্তমানে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। ভারত থেকে হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে ভিসা দেয়া হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী হাসিনা এখন ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনীর নিরাপত্তায় রয়েছেন।
গত মাসে জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে বলেছিলেন, হাসিনা খুব অল্প সময়ের নোটিশে দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন। তারপর একটি সর্বদলীয় ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, হাসিনাকে তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ভারত সরকার সময় দেবে। হাসিনা পালানোর পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার শপথের পরই তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোনকলের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানান। পরে ড. ইউনূস বলেছেন যে, ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। ৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস বলেন, আমরা চাই বিশ্ব বাংলাদেশকে একটি সম্মানিত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ভারতকে উদ্দেশ্য করে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সবাই ইসলামপন্থী, বিএনপি ইসলামপন্থী এমন ধারণা থেকে ভারতকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের সবাই ইসলামপন্থী এবং (তারা) এই দেশটিকে আফগানিস্তানে পরিণত করবে, বের হতে হবে এমন ধারণা থেকেও। আর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ। এসব ধারণা থেকে ভারতকে বেরিয়ে আসতে হবে আগামী দিনে। বাংলাদেশও অন্য প্রতিবেশীর মতোই একটি প্রতিবেশী দেশ।