বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে আবারও নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে (এনএসসি) সংযুক্ত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ সহকারী এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ক্যালি রাজ্জুক দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় তৃতীয় গণতন্ত্র সম্মেলনের প্রাক-পর্যালোচনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষে এমন অবস্থান ব্যক্ত করেন।
বুধবার ওয়াশিংটনের ফরেন প্রেস সেন্টারে আয়োজিত এই বিশেষ ব্রিফিংয়ে আরও বক্তব্য রাখেন এনএসসির উপসহকারী ইন্টেলিজেন্স এবং নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক সমন্বয়ক মাহের বিটার।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেট জানতে চান— সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ তৃতীয় গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাচ্ছে না বলে আমার ধারণা। আমার প্রশ্ন হলো— বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে বাইডেন প্রশাসনের যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন আমরা এই জালিয়াতির নির্বাচনের পর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না?
যেমনটি আমরা দেখেছি নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, গুয়েতামালা কিংবা কম্বোডিয়ার মতো দেশের বেলায়।
জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ সহকারী ক্যালি রাজ্জুক বলেন, আমি শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণের প্রসঙ্গে কথা বলছি না। কেননা, এটি এবারের সম্মেলনের আয়োজক দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে সম্পন্ন হবে। কিন্তু নির্বাচন সম্পর্কে, আপনার প্রশ্ন সম্পর্কে, আমরা মতামত দিতে চাই। অন্যান্য পর্যবেক্ষকের সঙ্গে আমরা একমত যে– বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। আমরা ব্যথিত যে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেফতারের বিষয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। সামনের দিকে অগ্রসর হতে একটি অবাধ এবং মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। আমরা দুই দেশের জনগণের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাই এবং এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দাবিদার ভারতের গণতন্ত্র বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন জানতে চেয়ে অপর এক প্রশ্নে জবাবে রাজ্জুক বলেন, আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, প্রতিটি গণতন্ত্র আলাদা এবং গণতন্ত্রের কোনো নীলনকশা নেই। আমরা স্পষ্টতই এই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছি। আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্য— আমরা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের ওপর খুব মনোযোগী ও কীভাবে আমরা সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নিতে পারি এবং গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করতে পারি।
তিনি বলেন, আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ২০২৪ সালটি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে নির্বাচনের বছর। এবং তাই আমরা খুব মনোযোগী যুবসমাজের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার দিকে, যাতে আমরা এই সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত হতে দেখতে পারি এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র বিকাশে পরবর্তী পদক্ষেপে গ্রহণে শীর্ষ সম্মেলনে সেরা অনুশীলনগুলো ভাগ করে নিতে সক্ষম হই।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৮-২০ মার্চ কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী সিউলে বসছে তৃতীয় গণতন্ত্র সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন এই সম্মলেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আহুত প্রথম গণতন্ত্র সম্মেলন হতে গণতান্ত্রিক শাসন, মানবাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণতন্ত্রিক বিশ্বের সরকার, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি পর্যায়ে শত শত নেতাকে একত্রিত করে আসছে।
তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে স্পাইওয়্যারের অপব্যবহার প্রতিরোধের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা জোরদার।