পিবিএ,ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষের আবেদন চিরন্তন ও সর্বজনীন। আগামীকাল ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ ১৪২৮। বাঙালির এক আনন্দ-উজ্জ্বল মহামিলনের দিন। আনন্দঘন এ দিনে রাষ্ট্রপতি দেশে-বিদেশে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, চির নতুনের বার্তা নিয়ে বাঙালির জীবনে বেজে উঠে বৈশাখের আগমনী গান। ফসলি সন হিসেবে মোঘল আমলে যে বর্ষগণনার সূচনা হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা আজ সমগ্র বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চিড় ধরাতে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি সামরিক সরকার বাংলা নববর্ষ উদযাপনসহ সকল গণমুখী সংস্কৃতির অনুশীলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত ভেদাভেদ ভুলে নববর্ষ উদযাপনে এক কাতারে সামিল হন।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালির এই মহামিলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। মঙ্গল শোভাযাত্রা মানবসভ্যতার প্রতিনিধিত্বশীল সংস্কৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ স্বীকৃতি ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার পাশাপাশি জাতি হিসেবে বাঙলির অসাম্প্রদায়িক অবস্থানকে আরও সমুন্নত করবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, ব্যবসা, পার্বণসহ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাংলা সনের ব্যবহার ওতপ্রোততভাবে জড়িয়ে আছে।’
এ বছর এমন একটা সময়ে বাংলা নববর্ষের দিনটি অতিবাহিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। তাই এখন সবারই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণকে করোনার ছোবল থেকে রক্ষা করা। সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একই সাথে দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে সকলের মাস্কসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। তিনি দেশবাসীর প্রতি আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়ে করোনা মোকাবিলার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অতীতের সব গ্লানি ও বিভেদ ভুলে বাংলা নববর্ষ জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যকে আরও সুসংহত করবে। সকল অশুভ ও অসুন্দরের ওপর সত্য ও সুন্দরের জয় হোক। ফেলে আসা বছরের সব শোক-দুঃখ-জরা দূর হোক, নতুন বছর নিয়ে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি এ প্রত্যাশা করি।’
পিবিএ/জেডএইচ