শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত : বাবা আছো তুমি ছায়া হয়ে সর্বদা আমার সাথে। চলার পথে পাই অসীম সাহস সমাজে কেউ করেনা অবজ্ঞা কেউ করেনা আমায় অবহেলা।
বাতাসেতে খূঁজে পাই নির্মলতা সুখের মত স্বপ্ন আজও আছে আমার কল্পনার সাতরং রংধনু মিশে অদূরে।
বহুদূরে হেঁটে যেতে চাই তোমার পাশাপাশি তোমার আঙ্গুল ধরে লাফালাফি করে নানান রকম বায়না করে, সেই ছোটবেলার মত যখন যেতাম বাজারে তোমারি সাথে, কখনও যদি বলতে নেবে না আমায় চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে ছুটে যেতাম তোমার পিছু পিছু মানতাম না আম্মুর কোন বাধা শুনতাম না কোন বারণ উদ্দেশ্য শুধু তোমার সাথে আমি বাজারে যাবো ঘুরতে। কতটাই না উৎফুল্লতা ছিল। তখন কখনও ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে যেতাম তোমারি আগে আবার আসতাম পিছনে ফিরে তোমার কাছে ভয় ছিল যদি বাজারে গিয়ে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায়, দুই হাত শক্ত করে ধরে রাখতাম তোমার হাতে ছাড়তাম না কখনও।
ঠিক তেমনি করে আজও ইচ্ছে করে তোমার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে অনেক উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যেতে অনেকের মাঝে নিজেকে উপস্থাপন করতে সফলতার সিড়ি বেয়ে চুঁড়ায় উঠতে।
তোমাকে সবার মাঝে তুলে ধরতে সবার সামনে তোমার মুখ উজ্জল করতে একজন সফল পিতা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্বে যেন তোমার বুক ভরে যায়।
বাবা আজও মনে পড়ে যায়,রাতে যখন গাড়ি থেকে ময়লা শরীরে জর্জরিত নিয়ে তুমি ফিরতে বাড়ি আমি দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে চড়ে বসতাম তোমার কোলে দুইহাতে তোমার গলায় ধরতাম আদরে কি যেনো আমার জন্য তুমি নিয়ে এসেছো, তুমি জড়িয়ে নিতে আমায় অতি মমতায়।
তোমার শরীর পরিষ্কার করে খাবার খেতে যখন বসতে তখন আমি তোমার পাশে গিয়ে বসতাম একটু তোমার হাতে খাওয়ার জন্য, তুমি মাঝে মাঝে অল্পটুকু খেতে দিতে আমি কতই না মজায় খেতাম সেই খাবার।
আজও ইচ্ছে করে আমার তোমার হাতের মমতায় মাখানো সেই ভাত একটু মজা করে আনন্দ নিয়ে খায়, কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না কারণ আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি নিজের হাতে খাওয়া শিখেছি।
তার পরও এখনো যখন গাড়ি থেকে বাসায় ফিরো খাওয়ার সময় আমাকে ফোন দিয়ে বলো প্রান্ত কৈই তুমি বাবা ভাত খাবি না ভাত তো ঠান্ডা হয়ে যাবে, আমি তোমায় বলি বাবা যাচ্ছি আমি বাসা আসি তার পর তুমি খেতে বসো।
বাবা, আজও মনে পড়ে যায় তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতাম কাটিয়ে দিতাম সারাটি রাত।
কতটাই না আনন্দের ছিল সেই দিনগুলো কোন প্রকার দুঃশ্চিন্তা নেই মনে কোন কিছুতে ভয় পাওয়ার অবকাশ নেই, তুমিতো আছো আমার সাথে আমার ছিলো না কোন ভয়। তুমি আমায় বুকে আগলে রেখেছো। আজও ইচ্ছে করে ঠিক তেমনি করে তোমার বুকে মাথা রেখে একটু ঘুমায় দুই হাতে জড়িয়ে নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে কাটিয়ে দিই পুরোটা রাত। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠে না আমিতো এখন আর সেই ছোট প্রান্ত বাবু বাচ্চা নেই।
বাবা সব-সময় তোমার কাছে থাকতে চাই।
দেখতে চাই তোমার হাসিমাখা মুখটি, যেমনটাই দেখে আসছি ছোটবেলা থেকে যখন এসে বলতাম তোমার কাছে “আব্বু, আমি আজ এই ভালো কাজটা করেছি তুমি আমায় কাছে টেনে নিয়ে কতইনা আদর করতে। “আব্বু” বলে সম্বোধন করতে আমায়, কত না স্বপ্নের কথা বলতে একদিন বড় হবো নামি দামি হবো সমাজের সকলের কাছে প্রান্ত নামটি পরিচিতি পাবো তখনই তোমার মুখ গর্বে উজ্জ্বল হবে।
কত না আশার বাণী শুনাতে, কখনও বুঝতে দাওনি অভাবের কথা, আমাদের জন্য কতই না কষ্ট করেছো আজো করে যাচ্ছো। তোমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই গাড়িতে ডিউটি করতেছো মানুষের কত ধরনের কত কথা শুনতেছো, কতইনা মানুষ অপমান ও কত খারাপ ভাষায় কথা বলছে। তুমি এসব সজ্যে করে টাকা রোজগার করে আমাদের লালন-পালন করতেছো।আমার এসব মাঝে মাঝে শুনে ও দেখে আমায় অনেক খারাপ লাগে কিন্তু বাবা আমি যে চাকুরি করি না তাই তোমার জন্য কিছু করতে পারি না।তুমি আমর জন্য দোয়া করিও আমি যাতে ভালো একটা চাকুরি পাই তার পর হয়তো আর তোমায় কষ্ট করতে দিবো না।
যেমন টা তুমি আমায় ছোট বেলায় আদর করতে সেই আদরটা যাতে আমি তোমায় করতে পারি।সর্বদায় রেখেছো তোমার ছায়াতলে আদর স্নেহ ভালবাসায় মিশিয়ে আমিও তোমায় যাতে করতে পারি।
বাবা আমার জন্য যতন করে রেখো তোমার অফুরন্ত দোয়া ও ভালবাসা। আমি যেনো একটা ভালো চাকুরি পাই। আমি যেন সব সময় থাকতে পারি তোমাদের মনের গহীনে অতি আদরের সন্তান হয়ে। যেন নিজেকে রাখতে পারি তোমাদের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। যেন কভু তোমাদের মনে কষ্ট না দেই, যেন না হই কভু তোমাদের অবাধ্য। সব সময় যেন থাকতে পারি
তোমাদের সকলকে সাথে নিয়ে, কাটিয়ে দিতে পারি সারাজীবন।
লেখক: সাংবাদিক
পিবিএ/এমএ