বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক,রাবি: সড়ক দুর্ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তথ্য বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী মোঃ সোহাগের মৃত্যুতে জড়িতদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে মানববন্ধন পালন করেছে।
রবিবার (২ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের প্যারিস রোডে বিভাগের আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন করে তারা দাবি জানান, রাস্তায় লাশের মিছিল জননী তুমি ঘুমাও কিভাবে, জীবনের মূল্য অর্থ নয় হত্যাকারীদের বিচার চাই, বয়কট ন্যাশনাল ট্র্যাভেলস, ডিজিটাল বাংলাদেশের এ কোন বিধান সড়কে কেন দিতে হবে হাজার হাজার প্রাণ, আমার ভাইয়ের লাশ রাস্তায় কেন? হাতে স্টিয়ারিং নাকি খুনের লাইসেন্স, রক্ত পিপাসা না মিটলে রাস্তায় নয় ঘরে এসে খেয়ে যাও, সড়ক তোকে লাশ বানালো আল্লাহ তোকে বেহেশত দিক,আর কত মায়ের কোল খালি হবে? স্বাধীনতা তুমি কার, ঘাতকের?
মানববন্ধনে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন,আমরা যারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি এক গ্রুপ শিক্ষক আরেক গ্রুপ ছাত্রছাত্রী। আমাদের এই দুই গ্রুপের রাস্তায় নেমে আসার কোন কারণ নাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে পাঠ দান করি, ছাত্ররা পাঠ গ্রহণ করে। আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শ্রেণীকক্ষে, তা বাদ দিয়ে আমাদের রাস্তায় কথা বলতে হচ্ছে। সোহাগের চলে যাওয়ায় হিসাব বিজ্ঞান পরিবার ও জাতির জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ। আমরা চাই এ ঘটনা গুলো বন্ধ হোক। এক ডাইভার রাতের শিফটে গাড়ি চালিয়ে সকালের শিফটে আবার চালাচ্ছে। তার কোন রেস্ট নাই। ডাইভাররা মাদক গ্রহণ করছে, গাড়ির ফিটনেস নেই। আমরা এ সকল কিছুর অবসান চাই।
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বেলাল হোসাইন বিপ্লবের সঞ্চালনায় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানিম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা রাষ্ট্রের সংকট হয়ে দাড়িয়েছে। সোহাগ ভাইয়ের মতো আর কোনো স্বপ্নবাজকে হারাতে চাইনা আমরা। আমরা প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসাবে বলতে চাই পরিবহন শ্রমিকদদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আমরা চাই নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার হোক।
নিহত সোহাগের বান্ধবী তানজিনা সূচি বলেন, আজকে আমাদের বন্ধু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমরা সবাই আজ থেকে ন্যাশনাল ট্রাভেলস বর্জন করার একাত্মতা পোষণ করছি এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বর্জন করার আহবান জানাচ্ছি। আমাদের দাবি, অতিদ্রুত ঘাতক ড্রাইভারকে বিচারের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কারিমুল বলেন, সোহাগ ভাই আমার খুব কাছের ছিলেন। ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। সোহাগ ভাই ছিলেন একমাত্র পরিবারের ভরসা। এখন তার পরিবারের হাল ধরবে কে? কে তার বোনদের পাশে দাড়াবে। এভাবেই অনেক পরিবার হারিয়ে ফেলছে তাদের পরিবারের বড় ছেলে বা মেয়েকে, এর শেষ কোথায় আমরা জানি না।
এর আগে, সোহাগের এমবিএ’র ফাস্ট সেমিস্টারের পরিক্ষা শেষে গ্রামের বাড়ী নরসিংদী যাচ্ছিলো। ন্যাশনাল ট্রাভেলস বাসটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে এসে উল্টে যায়। পরে আহত সোহাগকে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষনা করে। এতে সোহাগসহ আরো ৩জন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরো ১০ জন।
এছাড়াও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক লিয়াকত আলীা, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. তারেক নূর, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েদ উজ্জামান ও অধ্যাপক ড. শাহ আলমসহ তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
পিবিএ/মনির হোসেন/এমএসএম