পিবিএ,ঢাকা: গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে উপস্থিত থেকে নাশকতায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্তকৃত নাশকতার অন্যতম মূলহোতা এবং প্রায় ১৫টি মামলার পলাতক আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুম’কে তার ১ ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে উপস্থিত থেকে নাশকতায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তকৃত নাশকতার অন্যতম মূলহোতা এবং প্রায় ১৫টি মামলার পলাতক আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুম (৩৭) এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি নারায়ণগঞ্জ জেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি জজ মিয়া (৩৯)-কে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা তাদের দলীয় শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনায় গ্রেফতারকৃত মাসুম এর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় সহিংসতা ও নাশকতা চালায়। গ্রেফতারকৃত মাসুম গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাজধানীর পল্টন এলাকায় সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় আসে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা রাজধানীর পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালায়। এসময় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপরও হামলা চালায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফিরে আসে।
গ্রেফতারকৃত মাসুম শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাস্তা অবরোধ করে নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত মাসুম এর পরিকল্পনা মোতাবেক তার অনুসারীরা লাঠিসোটা হাতে মিছিল করে সোডাউন দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতংক ও ত্রাসের সৃষ্টি করে রাস্তা অবরোধ করে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নাশকতা ও সহিংসতার তান্ডব লীলা চালায়। তারা যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করতো। তাদের দলের নিকট নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিকট প্রেরণ করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা মূলত এসকল নাশকতা ও সহিংসতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ দেশে অরাজকতা পরিবশে তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছিল বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মাসুম এর নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যায়। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দায়েরকৃত ০৪টি নাশকতার মামলায় সে পলাতক ছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পূর্বে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় ১০টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত মাসুম ও অনুসারীদের এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সর্বশেষ কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় সেখানে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত জজ মিয়া গ্রেফতারকৃত মাসুম এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে গ্রেফতারকৃত মাসুম এর নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাস্তা অবরোধ করে নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নারায়নগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও সে গ্রেফতারকৃত মাসুমের নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে মাসুমের সাথে কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।