বিএনপির চিঠিতে জামায়াতের আপত্তি

পিবিএ, ঢাকা: জোটবন্ধু জামায়াতকে যেসব আসনে ছাড় দিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তা ফিরিয়ে দিয়েছে দলটি। ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আওতাধীন শরিক দলগুলোকে অর্ধশত আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সব দলই সিদ্ধান্ত নেয়, বিএনপির ধানের শীষ নির্বাচনী প্রতীকে ভোটে যাওয়ার।

তবে আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত মনকষাকষির সর্বশেষ সমীকরণ তা অনিশ্চিত করে তুলেছে। ওদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গেও আসন সমঝোতা হয়নি বিএনপির। দলটি চায় ৪টি আসনে তাদের প্রার্থী দিতে, বিএনপি দিয়েছে ৩টি। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাগপা কোনো আসনই পায়নি। এ জন্য ক্ষুব্ধ দলটি। বিভিন্ন দলের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, ২০-দলীয় নির্বাচনী জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতকে ১৯টি আসনে চূড়ান্তভাবে ছাড় দেয় বিএনপি। সে অনুযায়ী দলটির হাতে চিঠিও তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াত এতে আপত্তি তোলে। কারণ প্রাথমিকভাবে দলটিকে ২৫টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিল জামায়াত। একটি আসন রেখে বাকি ২৪টি আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় জামায়াত।

জামায়াত সূত্র জানায়, সিলেট-৫ আসনে তাদের পাশাপাশি জোটশরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকেও ছাড় দিয়ে চিঠি দেয় বিএনপি এবং পিরোজপুর-১ আসনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র শামীম সাঈদীকে প্রার্থী না-করার সিদ্ধান্ত নেয়। আসন বণ্টনসহ এসব বিষয় নিয়ে জামায়াত-বিএনপি সংকট দেখা দেয়। এর পর গতকাল রাতে বৈঠক ডাকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটি। বৈঠকে জামায়াত নেতারা সিদ্ধান্ত নেন চিঠি ফেরত দেওয়ার। একই সঙ্গে দলটি নির্বাচন করবে কিনা, তা নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে গতরাতে দলটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও জামায়াত নেতাদের কেউ ফোন ধরেননি বলে সূত্রের খবর।

Related image
জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা ২২টি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। শুরুতে ২৫টি আসনে দেওয়ার কথা হয়েছিল। এখন ৩টি কমে গেছে। কিন্তু এই তিনটি আসনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন এসব আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। আমার জানা মতে, আরও কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী করার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।

২০ দলের শরিক এলডিপি ৫, কল্যাণ পার্টি ১, এনপিপি ১, বিজেপি ১, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৩, কাজী জাফরের জাতীয় পার্টি ১; জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে গণফোরাম ৭, জেএসডি ৫, নাগরিক ঐক্য ৫টি আসনে নির্বাচন করবে।
জানা গেছে, জোট শরিকদের ছাড় দিতে গিয়ে লক্ষ্মীপুর ১-এ নাজিম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর ৪-এ আশরাফ উদ্দিন নিজান, বরিশাল ৪-এ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনজনই ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাংসদ ছিলেন। ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে মনোনয়ন পাননি।

এখানে গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীকে প্রার্থী করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে বাদ দিয়ে নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া জোট শরিকদের সঙ্গে দেনদরবারের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি সিলেট ১-সহ বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সিলেটে ১-এ আবদুল মুকতাদিরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বরগুনা ২-এ খন্দকার মাহবুব হোসেন, গাইবান্ধা ২-এ আবদুর রশিদ সরকার, পটুয়াখালী ২-এ শহীদুল আলম তালুকদার, ময়মনসিংহ ১-এ আলী আজগর, নারায়ণগঞ্জ ১-এ কাজী মনির, কুমিল্লা ৬-এ হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, জামালপুর ১-এ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, নেত্রকোনা ৫-এ আবু তাহের তালুকদার, চাঁদপুর ৩-এ শেখ ফরিদ উদ্দিন মানিক মনোনীত হয়েছেন।

জানা গেছে, সিলেট ১-এ মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দিয়ে মুকতাদিরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, মুকতাদির মনোনয়ন পাওয়ায় প্রয়াত সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর গ্রুপ তার বিরোধিতা করবে। বরগুনা-২ আসনে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ায় আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন নেতাকর্মীদের অনেকে।
যেসব আসন জামায়াতকে দিতে চায় বিএনপি

দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
গণফোরামের ৭ আসন

ঢাকা-৭ মোস্তফা মহসিন মন্টুু, হবিগঞ্জ-১ রেজা কিবরিয়া, মৌলভীবাজার-২ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, পাবনা-১ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ময়মনসিংহ-৮ খালেকুজ্জামান, কুড়িগ্রাম-২ মেজর জেনারেল (অব) আমসা আমিন। ঢাকা-৬ আসনটি গণফোরাম চাইছে দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর জন্য। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে খোকা-পুত্র ইশরাক হোসেনের জন্য। আসনটির সুরাহা হয়নি এখনো।
নাগরিক ঐক্যের ৫ আসন বগুড়া-২ মাহমুদুর রহমান মান্না, নারায়ণগঞ্জ-৫ এসএম আকরাম, রংপুর-১ শাহ মো. রহমাতুল্লাহ, রংপুর-৫ মোফাখখারুল ইসলাম, বরিশাল-৪ জেএম নুরু রহমান।
জেএসডির ৫ আসন লক্ষ্মীপুর-৪ আ স ম আবদুর রব, কুমিল্লা-৪ আবদুল মালেক রতন, কিশোরগঞ্জ-৩ ড. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৮ শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, শরীয়তপুর-১ নুরুল ইসলাম।
এলডিপির ৫ আসন চট্টগ্রাম-১৪ কর্নেল (অব) অলি আহমদ, চট্টগ্রাম-৭ মো. নুরুল আলম, কুমিল্লা-৭ রেদোয়ান আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-১ শাহাদাত হোসেন সেলিম, ময়মনসিংহ-১০ সৈয়দ মাহমুদ মোর্শেদ।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ টাঙ্গাইল-৮ ব্যারিস্টার কুঁড়ি সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল-৪ লিয়াকত আলী, গাজীপুর-৩ ইকবাল সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল-৩ আসনটিও চান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এটা নিয়েও দুদলের দরকষাকষি চলছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মুফতি ওয়াক্কাস যশোর-৫, শাহিনূর পাশা সুনামগঞ্জ-৩, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী নারায়ণগঞ্জ-৪
খেলাফত মজলিস
আহমেদ আব্দুল কাদের হবিগঞ্জ-৪, আব্দুল বাসিদ আজাদ হবিগঞ্জ-২, উবায়দুল্লাহ ফারুক সিলেট-৫।

এ ছাড়া পিপিবির রিটা রহমান রংপুর-৩; কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রাম-৫ এবং বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।সূত্র: আমাদের সময়।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন:

আরও পড়ুন...