পিবিএ,ডেস্ক: একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যান করার পরেও বিএনপির এমপিদের আচমকা শপথ গ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো শরিক দলের। আবার নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকার সাথে একমত নন ২০ দলীয় জোটের বহু শরিক। এরই মধ্যে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ জোট ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বিএনপি ও ফ্রন্টের নেয়া সাম্প্রতিক নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে জোট ও ফ্রন্টে বিরাজমান ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছে বিএনপি।
সোমবার জোটের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিরও বৈঠক হবে শিগগিরই।সোমবার বিকেল ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে। জোটের শরিক দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ২০ দলীয় জোটকে ‘তুচ্ছজ্ঞান’ করে ঐক্যফ্রন্ট গঠন ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের ভূমিকা নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হবে। একই সাথে আন্দালিব রহমান পার্থ কেন জোট ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন, বিএনপির এমপিরা কেন শপথ নিয়েছেন তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দালিব রহমান পার্থ চলে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর তার সাথে বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা যোগাযোগ করেছেন; কিন্তু পার্থ আবার ফিরে আসবেন বলে তেমন কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। জোটের আরেক শরিক লেবার পার্টিও ঐক্যফ্রন্টের সাথে সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছে। এ ইস্যুতে ওই দলের চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সাথে বিএনপি মহাসচিব বৈঠকও করেছেন।
ডা: ইরান বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোটকে আরো সক্রিয় অবস্থায় দেখতে চাই এটিই মূল কথা; কিন্তু অবহেলার কারণে সেটি হচ্ছে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা কর্মসূচির কথা বললেও তা আজো দেয়া হয়নি। অন্য দিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এরকম একটি অবস্থায় আজকের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোমবারের বৈঠক থেকে জোট ও ফ্রন্টের বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে করেন ডা: ইরান।
জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় থেকে পার্থকে ফোন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি বৈঠকে অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কেন পার্থ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্বান্ত নিলেন, এ প্রসঙ্গে শরিক দলের এক নেতা বলেন, ‘তার মনে হয় ভিন্ন এজেন্ডা রয়েছে। তিনি আর ফিরবেন বলে মনে হচ্ছে না।’
গত শনিবার নির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে জনমনে যেসব প্রশ্ন উঠেছে তা নিরসনে ড. কামাল হোসেনসহ ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্যের শপথ নেয়াকে স্বাগত জানানো এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথ নেয়া থেকে বিরত থাকাসহ জনগণের মনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যেসব প্রশ্ন জেগেছে, তার যথাযথ প্রতিকার ও প্রতিবিধান কামনা করছি। না হলে অত্যন্ত বেদনার সাথে আগামী ৯ জুন বা পরে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কৃষক শ্রমিক লীগকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হবো।
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব বিষয়ে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট আছে ভবিষ্যতেও থাকবে । উত্তাল সময়টা থামতে দিতে হবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক হলে আমরা বসে সঠিক সিদ্ধান্ত নিব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন রাজনীতি শুরু করতে নতুন ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ২০ দলীয় জোট গড়ে উঠেছিল মূলত চার দলীয় জোট থেকে। আর ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। সে কারণে নতুন দাবিতে রাজনৈতিক কৌশল নিরূপণ করতে ঐক্যফ্রন্ট, জোটসহ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির নতুন করে ঐক্য প্রয়োজন হবে।
তা নাহলে ভবিষ্যতে অস্তিত্ব রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়বে।
পিবিএ/এইচটি