পিবিএ,ডিএমসি: “বৃক্ষমানব” খ্যাত বহুল আলোচিত খুলনার পাইকগাছার আবুল বাজানদার আবারো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে গত রোজার মধ্যে চিকিৎসকদের একরকম না জানিয়েই হাসপাতাল থেকে চলে যান তিনি। তবে এবার বিদেশে তার চিকিৎসা করাতে আগ্রহ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি আবুল বাজানদারের সাথে সাক্ষাতে তিনি বলেন, অনেকটা হতাশা থেকেই হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছিলাম। সর্বপ্রথম ২০১৬ সনের ৩০ জানুয়ারী হাসপাতাল আসি। এরপর ছোটবড় সব মিলিয়ে ২৫ বারেরর মত আমার হাত ও পায়ে অস্ত্রোপচার করেন বার্ণ ইউনিটের চিকিৎসকরা। বৃক্ষমানব বাজানদার বলেন, এবার স্যারদের কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছি। বিদেশে আমার এই রোগের যদি কোনো চিকিৎসা থেকে থাকে তাহলে তারা যেনো আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। আর এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করি।
“ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারকে আজ সকালে এই কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, বিদেশে এর চিকিৎসার বিষয়ে আমার জানা নেই। আগামীকাল মঙ্গলবার বোর্ড গঠন করে এবিষয়ে আলোচনা করবেন তারা। সেখানেই আমার পরবর্তি চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
“চিকিৎসা চলাকালীন চিকিৎসকরা আমাকে জানান, তোমার এই সমস্যা কোনোদিন পুরোপুরি সেরে যাবেনা। সবসময় চিকিৎসার উপরই থাকতে হবে। এই শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।”
আবুল বাজানদার আরো বলেন, ২০১৬ সাল থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার অবস্থাতেও চিকিৎসকদের অনুমতিতে ৩বার ঘুরতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। গত রোজায় শেষবার যখন বাড়ি যেতে চাইলাম তখন চিকিৎসকরা আমাকে এইমর্মে লিখিত দিতে বললেন যে, ‘আমি আবুল বাজানদার, আমি আর চিকিৎসা করবোনা, আমি বাড়িতে চলে যাবো, আমার যদি কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো দায়ী থাকবেনা।” এজন্য আমি ভয়পেয়ে ওই লিখিত মর্মে স্বাক্ষর দিতে চাইনি। আর এই স্বাক্ষর না দিয়েই আমি বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। তবে পালিয়ে গিয়েছিলাম এটা বললে ভুল হবে।
৬/৭ মাস বাড়িতে থাকাকালীন আবুল বাজানদার তার সাড়ে ৫ বছরের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাহিরাকে গ্রামের “অাদর্শ শিশু বিদ্যালয়ে” প্লে’ শ্রেণিতে ভর্তি করান। এসময় বাচ্চার সাথেই তিনি বেশী সময় কাটান বলে জানান।
রবিবার সকাল ১০ টায় ঢাকা মেডিকেল বার্ণ ইউনিটে আসেন বাজানদার। আজ সোমবার দুপুরে তাকে ভর্তি করানো হয়। এরপর থেকে তিনি বার্ণ ইউনিটের ৬ তলার সিঁড়ির পাশে ফ্লোরে বিছানা পেতে রয়েছেন। এ বিষয়ে বাজানদার বলেন, ২দিনে গোসল করতে পারিনাই। হাসপাতাল থেকেও খাবার দেওয়া হচ্ছেনা। তবে অাজ সোমবার সন্ধ্যা থেকে খাবার দেওয়া হবে বলেছেন। আর ক্যাবিন ফাঁকা হলে আমাকে কেবিনে দেওয়া হবে।
বিদেশে এই রোগের কোনো চিকিৎসা না থাকলে ঢামেক বার্ণ ইউনিটে তিনি তার চিকিৎসা করাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাজানদার বলেন, বিদেশে এই রোগের চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা না থাকলে এখানে আর চিকিৎসা করাবোনা। বারবার অস্ত্রোপচার করে শুধুশুধু নিজের উপর দিয়ে একটা আজাব যায়।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সরল গ্রামের ছেলে আবুল বাজানদার বাব-মা, স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়েই তার সংসার। ১২/১৩ বছর আগে থেকেই তার হাত ও পায়ে গাছের শিকড়ের মত গজাতে শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে তা ছোটছোট ঘামাচির মত থাকলেও দিনদিন তা গাছের শিকড়ের মত বড় হতে থাকে। এর পরে প্রায় ২৫ বারের মত অস্ত্রোপচারেরর মাধ্যমে তার হাত পায়ের শেকড় গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়। তবে তা আবার গজাতে থাকে।
পিবিএ/এইচ এ/জেডআই