মারুফ সরকার,স্টাফ রির্পোটার: সরকার নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও চুরির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিবার্তা ও জাগরণ টিভির সুহৃদ ও স্বজনেরা। এতে বক্তারা বলেন, গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার চেয়ে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো হামলার অভিযোগ থানায় গ্রহণ না করা। আর সন্দেহভাজনদের কথা উল্লেখ করে মামলা করতে গেলেও তিনদিনে মামলা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিবার্তা ও জাগরণ টিভির সুহৃদ ও স্বজনদের উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বিবার্তা ও জাগরণ টিভি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও চুরির প্রতিবাদে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানবন্ধনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার চেয়ে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো হামলার অভিযোগ থানায় গ্রহণ না করা। সন্দেহভাজনদের কথা উল্লেখ করে মামলা করতে গেলে তিনদিন তাদের মামলা গ্রহণ করা হলো না। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার তদন্তের পাশাপাশি পুলিশ মামলা গ্রহণ করতে গড়িমসির বিষয়টিও তদন্ত হওয়া উচিত।
মামলা গ্রহণ করতে এত অনীহা কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, অপরাধীরা কি এতই শক্তিশালী? মালিকপক্ষ অগাধ সম্পত্তির মালিক। তাহলে কি ন্যায়ের চেয়ে সম্পত্তি বড় হয়ে গেল? তার আজ্ঞাবহ হতে হবে! এটা আমাদের সংবিধান বলে না। অবিলম্বে বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি নেতা পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের নির্দেশে বিবার্তা-জাগরণ অফিসে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা দেশের জন্য অশনি সংকেত।
তিনি বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘মাইক’ সিনেমার এডিটেড ফাইনাল ফুটেজের পোর্টেবল হার্ডডিস্ক চুরি করে নিয়ে গেছে। আগামী মার্চ মাসের শুরুতে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে। এই হার্ডডিস্ক না পেলে নির্ধারিত সময়ে সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারবো না। অতি দ্রুত ফুটেজ খুঁজে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এফ এম শাহীন বলেন, যত হাজার কোটি টাকার মালিক হোন না কেন আমরা রাস্তায় দাঁড়াতে জানি। রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আমরা ভয় পাই না। আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা রুখে দাঁড়াবো।
এসময় গণমাধ্যম অফিসে হামলা ও ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আজকে বিবার্তা ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। কালকে যে আরেকটি গণমাধ্যমের উপর হামলা হবে না, তার কি নিশ্চয়তা? এই দায়ভার কে নেবে? আর আজকে পুলিশ প্রশাসনও পরিকল্পিতভাবে একটি পক্ষ নিচ্ছে! ভাবা যায়? আমরা কোথায় আছি? অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।
সিনিয়র সাংবাদিক শাহনেওয়াজ দুলাল বলেন, লজ্জায় মাথা নুয়ে আসে এই রকম একটি জঘন্য ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে হচ্ছে! আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। আর এই ঘটনা পুলিশকে আগে ম্যানেজ করে ঘটানো হয়েছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ পুলিশ এই ঘটনায় মামলা নিতে নানা গড়িমসি করেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য শাহনাজ পলি বলেন, এই রকম একটি জঘন্য ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের বিচারের দাবিতে দাঁড়াতে হবে, সেটাও কখনো কল্পনা করতে পারিনি। অথচ বলা হয়, গণমাধ্যম নাকি সমাজের আয়না। কিন্তু সেই আয়নাকে কীভাবে তছনছ করা হচ্ছে, সেটা কে দেখবে? শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় মামলা নেয়া হয় না! পুলিশের কাজ কী? আমি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিক নেতা শেখ মুহাম্মদ জামাল হোসাইন (শেখ জামিল) বলেন, যারা এই দুটি গণমাধ্যমে হামলা করেছে তারা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোমিন মেহেদী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় সেই সময়ে তারই রাজনৈতিক কর্মী ও সংবাদ যোদ্ধার কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। দেশ যখন এগিয়ে চলছে তখন এই দেশে একটি চক্র অগ্রগতি বাধাগস্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে। এই শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।
জয় বাংলা সাংবাদিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান বাবু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার জন্য বিবার্তা ও জাগরণ কাজ করছে। সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই সময়ে গণমাধ্যম অফিসে হামলার নিন্দা জানাই। অবিলম্বে হামলাকরীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করছি।
লায়ন মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ বলেন, বিবার্তা ও জাগরণ স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী গণমাধ্যম। কখনোই স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে কম্প্রোমাইজ করেনি। তাদের কার্যালয়ে হামলায় আমি বাকরুদ্ধ ও চিন্তিত।
ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রজেন্টেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) শফিক রহমান বলেন, গণমাধ্যমের মুখ যাতে কেউ বন্ধ না করতে পারে প্রশাসনকে সেই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবির রায়হান বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, চুরি করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা এবং একইসাথে গণমাধ্যমের জন্য অশনি সংকেত। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।