বিচ্ছেদকেই সমাধান ভাবছে আফ্রিকার মেয়েরা

পিবিএ ডেস্ক : কখনও গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা, চিৎকার-চেঁচামেচিও করেনি তোমার স্বামী। বিবাহ বহির্ভূত কোনও সম্পর্কও নেই লোকটার। তারপরও বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছে জালিকা। কিন্তু কেন?

কোলের ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছিল জ়ালিকা। জ়ালিকা আমাদু। পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নিজ়েরের বাসিন্দা। বয়স এখনও কুড়ির কোঠায় পৌঁছয়নি। কোলে সদ্যোজাত আফান। বিচারকের প্রশ্নে চোখ তুলে তার মুখের দিকে তাকাল জ়ালিকা। তারপরে চাপা স্বরে বলল, ‘আমার মন ভরে না। বাপের থেকে বড় একটা লোক। রোজগারপাতিও নেই ঠিক মতো। বিয়ের আগে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছিল। আর এখন! আমি ওর সঙ্গে আর থাকব না ।‘ পাশ থেকে আর্তনাদ করে ওঠেন জ়ালিকার মা, ‘হায় আল্লা, স্বামীর ঘর করবে না বউ, এ কেমন কথা। কী দিনই না দেখতে হল!’

জ়ালিকা একা নয়। রীতিনীতির ঘেরাটোপে বন্দি পশ্চিম আফ্রিকার ছোট ছোট দেশগুলোতে এখনও মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় ১৫১৬ বছর বয়সের মধ্যেই। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তান। তারপরে আরও কয়েকটা। বিয়ের আগে যদি বা কিছু পড়াশোনা বা হাতের কাজ শেখা হয়, বিয়ের পরে সে সব পুরোদস্তুর বন্ধ। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এই দেশে জ়ালিকাদের মতো পরিবারে অভাবঅনটন নিত্যসঙ্গী। স্বামীর রোজগার নেই। কিন্তু তবু স্ত্রীকে রোজগার করতে বাইরে বের হতে দেবে না। সেই বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চান জ়ালিকার মতো তরুণীরা। দ্বারস্থ হন আদালতের বিবাহ বিচ্ছেদের আর্জি জানিয়ে।

মুসলিম অধ্যুষিত নিজ়েরের মতো পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা নয়। তিন তালাকের কোনও প্রথাও নেই এখানে। বিচ্ছেদের জন্য দ্বারস্থ হতে হয় আদালতের। কিছু দিন আগে পর্যন্ত বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যেতেন পুরুষেরাই। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছবিটা দ্রুত পাল্টেছে। জ়ালিকা যে আদালতে গিয়েছেন, সেখানকার বিচারক আলকালি ইসমায়েল জানালেন, এখন মাসে প্রায় পঞ্চাশ জন মহিলা বিচ্ছেদ চেয়ে কোর্টে আসেন। ইসমায়েলের কথায়, ‘এই সব কমবয়সি মেয়েরা আর সহ্য করতে চায় না। তারা জানে, আদালতই তাদের মুক্তি দিত পারবে।’

 

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...