বিভেদ-বিভাজন নয়, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে: মির্জা ফখরুল

পিবিএ,ঢাকা: বিভেদ-বিভাজন নয়, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে হতাশার কথা বলেন, আমি হতাশায় বিশ্বাস করি না। শহীদ জিয়ার চিন্তা ও আদর্শ এবং খালেদা জিয়ার অবদান ব্যর্থ হওয়ার নয়। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।’

বুধবার (২৯মে) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজকের এই শাহাদাতবার্ষিকীতে আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা বিভক্তির চিন্তা করব না, আমরা কোনো বিভাজনের চিন্তা করব না।’

বিভেদ-বিভাজন নয়, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শকে অনুসরণ করে বিএনপিকে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করব। দেশের মানুষ জিয়াউর রহমানকে ভালোবাসেন, খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন। অবশ্যই তারা উঠে দাঁড়াবেন, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকেই হতাশার কথা বলেন। আমি হতাশার কথা বলতে চাই না, বিশ্বাস করি না। শহীদ জিয়ার আদর্শ, চিন্তা, দর্শন তা কখনোই ব্যর্থ হওয়ার নয়। খালেদা জিয়ার অবদান, ত্যাগ স্বীকার তা কখনোই ব্যর্থ হওয়ার নয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আসুন, আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শপথ গ্রহণ করি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য শপথ গ্রহণ করি এবং বিএনপিকে একটি সত্যিকার অর্থেই শক্তিশালী সংগঠন, যা জনগণের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করি।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যে সংসদকে আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম, যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলাম, যে সংসদকে অবৈধ বললাম সেই সংসদে আমাদের যোগ দেওয়ার কারণে দলের অনেক নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। এই ধরনের ক্ষোভ থাকা ভালো না। এই ক্ষোভ যদি আমরা দূর করতে না পারি তাহলে জাতীয়ভাবে আমাদের রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে পারব না।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে, পরিচালনা করতে না পারি, তাহলে আমরা শহীদ জিয়াউর রহমানের এই দলকে সুসংগঠিত করতে পারব না। এখন বিএনপির জন্য একটি বিরাট সংকটকাল। আমাদের নেত্রী অসুস্থ এবং কারাগারে।’

মওদুদ বলেন, ‘আজকে নয়, কালকে বেগম জিয়ার মুক্তি হবে এবং তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি এই মুহূর্তে কারাবন্দি, তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না, আমরাও তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। তিনি (খালেদা জিয়া) আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। আমাদের নেতা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। আর দেশে চলছে একদলীয়, নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী শাসন। তাই এখন সর্বত্র জুড়ে প্রয়োজন ঐক্য বজায় রাখা।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আপনারা নেতা বলেন আর যাই বলেন, আমরা যদি ব্যর্থ হয়েও থাকি আর ব্যর্থ না হয়েও থাকি; আর ব্যর্থ হয়ে থাকলে আমাদের সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু দলটাকে শক্তিশালী রাখতে হবে।’

নির্বাচনের পর দলের ভূমিকার কথা স্মরণ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনের পর দলীয়ভাবে আমরা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম এবং সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলাম। সে জন্য আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি নাই। আর যারা অংশগ্রহণ করেছিল প্রায় ২০০ জন, তাদের আমরা বহিষ্কার করেছি। গত নির্বাচনে আমাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, জেল খেটেছেন, এমনকি অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু সংসদে যোগদান করার কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বিরাট ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিএনপির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের দিতে হবে। এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা দিতে পারি, তাহলে শহীদ জিয়ার দলকে আমরা সুসংগঠিত করতে পারব।’

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমি মনে করি, অবিলম্বে আমাদের একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই ভেদাভেদ, ক্ষোভ দূর করার জন্য সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি ডেকে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে।’

দলটির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান ও সেলিমা রহমান, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পিবিএ/আরআই

আরও পড়ুন...