পিবিএ ডেস্ক: দীর্ঘদিন থেকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীরা স্থান পেয়েছেন। শোনা গেছে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ পড়ার কথা। বিমানে নিয়োগ পেতে বিভিন্ন মহলের তদবিরের রাজত্বে অসহায় ছিলেন মেধাবী প্রার্থীরা। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সেই বদনাম এবার বোধহয় ঘুচল।
গত শুক্রবার (৫ জুলাই) চুক্তিভিত্তিক কেবিন ক্রু পদে আইকিউ (বুদ্ধিমত্তা) টেস্ট ও শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন পরীক্ষা শেষে তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রকাশ করে বিমান কর্তৃপক্ষ। ফলে কোনো প্রার্থী তদবির করার সুযোগ পাননি। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করবে বিমান। মোট ৩০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
এর আগে আইকিউ টেস্ট ও শারীরিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন পর ফলাফল প্রকাশ করা হতো। তবে এবারই প্রথম কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ফলাফল প্রকাশ করা হলো।
বিমানের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলের তদবিরের রাজত্বে অসহায় ছিলেন মেধাবী প্রার্থীরা। বিমানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি পেয়েও কর্মকর্তারা ইংরেজি বলতে পারেন না, কম্পিউটার কম্পোজ এমনকি ই-মেইল পর্যন্ত পাঠাতে পারেন না। স্বজনপ্রীতি আর অর্থের লেনদেন ছিল নিয়োগ ও পদোন্নতির মূল।
তবে সম্প্রতি এই দুর্নাম ঘোচাতে কাজ শুরু করেছে বিমান প্রশাসন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আগের সব নিয়ম বাদ দিয়ে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে বিমান।
বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিমানে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত বিশেষ বিশেষ কাজগুলো গোপনীয়তার সঙ্গে কেবল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালক (প্রশাসন) মিলে করছেন। এ ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখছেন না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে খাতা দেখে ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে। তদবির আসার সম্ভাব্য কয়েক ঘণ্টা মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। ফলে এখন কেউ আর তদবির করতে পারছেন না।
এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে পরে কিছু কিছু তদবির এসেছে। কিন্তু আমরা সে সবে কান দেইনি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তখনো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিমানে আর তদবির চলবে না। মেধা ও যোগ্যতার বিচারে নিয়োগ দিতে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি কেবিন ক্রু পদে আইকিউ টেস্ট ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেন মোট ৩ হাজার ৭৮৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৮১৫ জনকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্যে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮১ জন পুরুষ এবং ১৩৪ জন নারী প্রার্থী।’
বিমানের নিয়োগ-সংক্রান্ত অতীত বর্তমান জানতে চাইলে সংস্থার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারহাত হাসান জামিল বলেন, ‘আমরা অতীতকে ভুলে যেতে চাই। নতুন করে উদাহরণ তৈরি করতে চাই। মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে আমরা বিমানকে যোগ্য আসনে নিয়ে যেতে চাই।’
পিবিএ/এমএসএম