পিবিএ,কুড়িগ্রাম: এক সময়কার পানি প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন খরস্রোত ধরলা নদী এখন বিলীন প্রায় । মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ এ নদী বাংলাদেশের মোগলহাটের কর্ণপুর দিয়ে প্রবেশ করে কুড়িগ্রাম জেলার অদূরে যাত্রাপুরে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বর্তমানে ২ শতাধিক চর-সৃষ্টি করে নদীটি এখন ফুলবাড়ীর মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে। গভীরতা কমে যাওয়ায় মানুষ পাঁ হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে ধরলার বুক দিয়ে। অনেক স্থানে নদীটির বুক যেন এখন আবাদী জমি। ধরলা শুধু এখন কালের সাক্ষী।
সেচ পাম্পগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি উত্তোলন না হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক এখন দিশেহারা। বৃহৎ আকারে দ্বীপচর জেগে উঠেছে ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ী ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-যতিন্দ্র নারায়ণ, চর-পেচাই, চর-গোরক মন্ডপ এবং লালমনিরহাটের চরখারুয়া, বোয়ালমারি এবং বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশপেচাইকে নিয়ে।
চর্তুদিকে ধরলাসহ বেষ্টিত এ দ্বীপ চরটিতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোকের বসবাস। নাব্যতা না থাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এক সময়কার খরস্রোত ধরলাটি মরা নদীতে পরিণত হওয়ায় সেখানকার মানুষজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম বিপর্যয় ঘটছে এ এলাকার কৃষিতে। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র। ফলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি ও এ অঞ্চলে মরুকরণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
ধরলাপাড়ে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি মহল শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পশ্চিম পাড়ের প্রোটেকশন বাধেঁর নিকট স্থান থেকে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সোনাইকাজী গ্রামে ধরলার পাড়ে বিএডিসির পাওয়ার পাম্প (গভীর নলকূপটি) দিয়ে আর পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোঃ জাকারিয়া মিঞা বলেন নদী শাসনের ব্যবস্থা না থাকায় এক সময়কার খড়শ্রোতা ধরলা এখন গতিহীন হয়ে পড়েছে। ধরলার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া চাপ পড়েছে দুইপারে। ফলে দ্রুত ভাঙ্গছে ধরলার দুইপাড়। এভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় নদী শাসন।
শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পাড়ের চা বিক্রিতা তছলিম উদ্দিন(৪৫)। স্থানীয় আলমগীর ও আমিনুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, এক সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জের লোকজন বড় বড় নৌকা নিয়ে ব্যবসা করার জন্য এ এলাকায় আসত। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় তারা আর এখানে আসেন না। ধরলা পাড়ের নৌকার মালিকরা নৌকা চালাতে পারছেন না।
ধরলার পাড়ের মাছ চাষি আফজাল হোসেন বলেন, স্থানীয় মাঝিরা ধরলা নদী প্রচুর মাছ শিকার করতো। মাছ শিকার করে তাদের পরিবার চলতো। ধরলা এখন মরা। এখানে কোন মাছ নেই, তারা সারা দিন জাল দিয়ে মাছ ধরেও ৫০ টাকার মাছও পায় না। তারা বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্ট করে বেঁচে আছি।
তিনি আরও জানান, গত এক বছর ধরে ধরলায় নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করছি। ধরলায় পানি না থাকায় ভাসমান খাঁচায় মাছ করা করা যাচ্ছে না। সরকার ধরলা নদীতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করলে এখানকার স্থানীয় মাছ চাষী ও জেলে পরিবারগুলো মাঝে স্বস্তি ফিরে পাবে এবং তারা আগের মতোই মাছ শিকার করে জীবিকা নিরবাহ করতে পারবে।
ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ-হারুন জানান, এ নদীটি পুর্নরুদ্ধার করতে হলে তলদেশ খনন এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা গেলে নদীটি আবার তার আগের রূপ ফিরে পাবে। সেই সাথে ধরলা পাড়ের হাজারো মানুষের মাঝে প্রাণচঞ্চলতা ফিরে পাবে।
পিবিএ/ইএইচকে