বিলুপ্তির পথে মান্দার সোনা বিবির মসজিদ

পিবিএ,নওগাঁ: নওগাঁ সদর উপজেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ। সেখান থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৫০০ গজ দুরে কুশুম্বা গ্রামে সোনাদিঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত সোনা বিবির মসজিদ। যা সুলতানী আমলের একটি প্রত্নতত্ব নিদর্শন। ৬ ফিট পুরুত্বের দেয়াল বিশিষ্ট ও ৩৬ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ১৬ ফিট প্রস্থ মসজিদটির দক্ষিন-পশ্চিমের ভিটাগুলোতে বিধ্বস্ত পাকাবাড়ির ধ্বংসাবশেষ, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ছিটানো ইট ও কংকরের প্রাচুর্যতা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় একটি রাজকীয় প্রশাসনিক স্থান তথা আন্তঃপ্রাদেশিক অঞ্চল থাকায় এই স্থান অতীতে নগর সভ্যতায় উন্নত ছিল।

নওগাঁ সদর উপজেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ
মসজিদের ধ্বংসাবশেষ

সোনাবিবির মসজিদের পাশে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর বেগম কুশুমবিবির বাসস্থান ছিল মর্মে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত সোনাবিবির মসজিদের চার কোনের ৩ পিলার এবং কিছু অংশ আজও কালের সাক্ষী হয়ে তার অতীত অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে।

২০০৪ সালে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার উপরেই নির্মিত হয়েছে কুশুম্বা সোনা মসজিদ হাফেজিয়া মাদ্রাসা। আর এটি তৈরী করতে গিয়ে নষ্ট করা হয়েছে মসজিদটির প্রাচীন কিছু নিদর্শণ। মসজিদে প্রবেশ দরজার একটি পাথরের চৌকাঠ এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও অন্য অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত ইটপাথরের সাথে পূর্বদিকে পড়ে আছে। শামস উদ্দীন আহম্মদ রচিত এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “ওঠ” গ্রন্থের ১৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিত একটি তথ্য মতে রাজশাহী জেলা পরিষদের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী সোনাদিঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত সোনা বিবির মসজিদের ধ্বংস্তুপ থেকে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন।

এতে ধ্বংসপ্রাপ্ত সোনাবিবির মসজিদ খ্রিস্টাব্দ ১৪৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মোতাবেক আরবী ৯০৪ হিজরীর ১৩ জমাদিউল আওয়াল তারিখে নির্মিত হয়েছিল। ‘রিয়াজ-উস-সালাতীন’ থেকে সুখময় মুখপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, ‘হোসেন শাহ তাঁর পিতা আশরাফ আল হোসেন ও ভ্রাতা ইউসুফের সঙ্গে সুদুর তুর্কিস্থানের “তারমুজ” শহর থেকে রাঢ়ের চাঁদপুর মৌজায় বসতি স্থাপন করেন।

সেখানকার কাজী তাদের দু’ভাইকে শিক্ষা দেন এবং তারা উচ্চ বংশ মর্যাদার কথা জেনে নিজের কন্যার সাথে বিবাহ দেন।’ এরপরে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ গৌড়ের সুলতান হন। কিন্তু এর পরের ঘটনা আরো চমকপ্রদ। এই কাহিনীগুলো ইতহাসে লিপিবদ্ধ নেই কিংবদন্তিতে প্রচলিত।

সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর বেগম কুশুম্বা অঞ্চলে বনবাসে এলে এই অঞ্চল পুনরায় নগর সভ্যতায় উন্নত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কুশুম্বা অঞ্চলকে একটি প্রাদেশিক মর্যাদায় উন্নিত করেন। এই প্রদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন (সম্ভবত) রামনদলকে।

যিনি ৯০৪ হিজরীতে সোনাদিঘির দক্ষিন পাড়ে সোনাবিবির মসজিদ নির্মাণ করেন। লেখক আশরাফুল ইসলাম পলাশ কিছু তথ্য, উপাত্ত্ব এবং যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “কুশুমবিবি এবং সোনাবিবি” এ দুজনার সম্পর্কে সঠিক কোন বিবরণ লিপিবদ্ধ না থাকলেও বিতর্ক আছে। তবে কুশুমবিবি এবং সোনাবিবি নামে যে কেউ সুদূর অতীতে ছিলেন তা ধারনা করা যায়।

কারন অনেকেই মনে করেন কুসুমবিবির মৌজার নাম কুশুম্বা হয়েছে। জনশ্রুতি আছে, গৌড়ের বেগম কুশুমবিবি নির্বাসিতা হয়ে মান্দা এলাকায় বিপুল ধনরত্নসহ বনবাসে আসেন। তিনি কুশুম্বার অদূরে ধনতলা নামক স্থানে তাঁবু গাড়েন। এর অল্পদিন পরে সোনার মৃত্যু হয়। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, আমি যতটুকু বিভিন্ন বই পুস্তক ও সরজমিনে গিয়ে জানতে পেরেছি, কিংবদন্তি আছে, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র “সোনা” নামের আদরের একটি কন্যা ছিল।

অকালে তার প্রয়ান হলে মানসিকভাবে সুলতান ভেঙ্গে পরেন। এ সময় তার এক কন্যার স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য একটি মসজিদ নির্মনের পরামর্শ দেন, আর সেই পরামশের ফলই নাকি ‘সোনামসজিদ’।
যা সুলতানী আমলের একটি প্রত্নতত্ব নিদর্শণ হতে পারে। আমি ইতিমধ্যে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরে যোগাযোগ করছি। যাতে ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষেনে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

পিবএি/বিএবি/আরআই

আরও পড়ুন...