বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে দস্যুদমনে পুলিশের বিশেষ অভিযান

পিবিএ,বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে দস্যুদমন ও সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে মোংলা বন্দরের ওয়াটার জেটির পশুরনদী সংলগ্ন এলাকা থেকে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের তত্বাবধানে এ অভিযান শুরু করা হয়। মোংলা থানা পুলিশের ২০ সদস্যের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সুন্দরবনসহ উপকুলীয় এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করবে। যা মোংলা থেকে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন হিরোনপয়েন্ট পর্যন্ত তাদের টহল চলমান থাকার কথা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বনের অমুল্য বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রানী রক্ষায় বহু পদ্ধতি ব্যাবহার করা হচ্ছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে, কিন্ত কোনটাই কাজে আসছে না। পাচার হচ্ছে সুন্দরী,পশুর,বাইনসহ বহু মুল্যবান গাছ। বনের গহীন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য বন্যপ্রানী। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় বনের মৎস্য সম্পদ ও সুন্দরবনের বণ্যপ্রানী শুণ্যের কোঠায় নেমে আসবে।

সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ব ঐতিহ্য “ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড” হিসেবে স্বীকৃত এই বনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে বাঘ, বানর, চিত্রা ও মায়া হরিণ, বন বিড়াল, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন, লোনা পানির কুমির, বন্য শুকর ও উদবিড়ালসহ ৩৭৫ প্রজাতির প্রাণী। যা এখন প্রায়ই বিলুপ্তির পথে।

বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, সুন্দরবনের মধ্যে চোরা শিকারীরা বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ) শিকার করে তার চামড়া, হাড় ও মাংশপেশী বেশীদামে বিক্রি করছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারনে নোনা পানির কুমিরও মারা পড়ছে। প্রতিনিয়ত চোরাই ভাবে মায়া ও চিত্র হরিন জাল ও ফাদঁ পেতে শিকার করছে। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন থেকে এ মায়াবী হরিনের বিচরন। এক শ্রেনির হরিন শিকারীরা অসাধু কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় জেলে বেশে বনের গহীনে প্রবেশ করে। বনের মধ্যে অস্ত্র বা ফাঁদ পেতে অহরহ শিকার করছে হরিন যা লোকালয় এনে বেশী মুল্যে বিক্রি করছে তারা।

তাছাড়া জেলেরবেসে বনে প্রবেশ করে নদী ও খালে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। সুন্দরবনের খালের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করলে শুধু মাছ নয় এখানে যা কিছু থাকে সব কিছুই মরে যায়। আর এ বিষ যুক্ত মরা মাছ অন্য পশুপাখী খেলে সেগুলোও মারা যায়। যার ফলে বনের পরিবেশ নষ্টসহ ক্ষতি হয় অপুরনীয়।

একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানুষসৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের প্রাণীকুল সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যেও মানুষের নিষ্ঠুরতা। এ বনে নানা প্রজাতির পশুপাখী ছাড়াও রয়েছে মৎস্য সম্পদের ভান্ডার, যা এ বনের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের ভুমিকা অপরিসীম। তাই এ বনের বিপুল পরিমাণ গাছপালা ও পশুপাখি রক্ষার জন্য বিশেষ করে সরকারের নির্দেশনা মতে চলতি দুই মাস মৎস্য সম্পদের পাশাপাশী নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ডসহ বনের দস্যুদমন ও বনজ সম্পদ রক্ষায়ও এখন থেকে কাজ করবে পুলিশ। তাই এ অভিযান অব্যাহত থাকার ঘোষনা দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আসিফ ইকবাল, থানার ওসি মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
পিবিএ/শেখ সাইফুল ইসলাম কবির/এসডি

আরও পড়ুন...