পিবিএ ডেস্ক: আমি যখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন থেকেই লক্ষ্য—বিসিএস ক্যাডার হওয়া। নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম। বিশেষ করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খবর, চলতি বিশ্বের ঘটনাবলি। সাধারণ জ্ঞান, সাহিত্যের বিষয়গুলোও খেয়াল করতাম। যেসব তথ্য দরকারি বা ‘পরে মনে থাকবে না’ মনে হতো সেগুলো নোট করে রাখতাম। কয়েকজন মিলে চলত গ্রুপ স্টাডি। আগের ছয় দিনের স্টাডির ওপর রিভিউ নিয়ে বসতাম প্রতি শুক্রবার। একজনের মাধ্যমে আরেকজনের টেস্ট নেওয়া হতো। বিসিএস পরীক্ষার জন্য এ প্রস্তুতি বেশ কাজে দিয়েছে। ভালো প্রস্তুতির জন্য দরকার ঠিকঠাক পরিকল্পনা। তা না হলে প্রস্তুতি এগোবে না। আমার মতে, বিসিএস ক্যাডার হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ (স্নাতক) থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। সময় যত যাবে জানার পরিধি ততই বাড়বে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রস্তুতির শুরুতেই বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতির ধারণা নেবেন। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সিলেবাসটা দেখে বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানবেন। প্রথম বর্ষে পড়াশোনার চাপ একটু কম, তাই প্রস্তুতির জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের নমুনা দেখলে প্রশ্ন কেমন হবে জানা যাবে। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকায় জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ, খেলাধুলার খুঁটিনাটি পড়তে হবে, দরকার হলে নোট করে রাখতে হবে। পরে সময়মতো সেগুলোতে চোখ বোলালেই চলবে। বাংলা ও ইংরেজি Vocabulary-র দিকে জোর দিতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ১৫-২০টি word, synonym ও Antonym পড়তে পারলে ভালো হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা প্রার্থীদের এক রকমের হতাশা কাজ করে এই ভেবে যে—বিসিএসে তাঁদের চেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়তি মূল্যায়ন করা হয়। আসলে পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য করা হয় না, প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয় মেধা বা ফলাফলের ভিত্তিতে। মৌলিক বই পড়ার পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন বই, বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত বিষয়ের পাঠ্য বই পড়লে প্রস্তুতি জুতসই হবে। যেসব প্রার্থী টিউশনি করেন তাঁরা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অনেকাংশেই এগিয়ে। শিক্ষার্থীদের বাংলা, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি পড়াতে গেলে যে চর্চা হয়, বিসিএস দেওয়ার সময় সেটা বেশ কাজে আসে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়ালে কথা বলার জড়তাও কেটে যায়। পাঠ্য বইয়ের বাইরে তথ্য ও ইতিহাসসমৃদ্ধ বই পড়ার চেষ্টা করবেন। এ ধরনের বইয়ের তালিকায় প্রথমেই রাখবেন—অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও একাত্তরের চিঠি। পড়ার তালিকা থেকে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা আলোচিত কোনো বই যেন বাদ না যায়। কোন কোন বিষয়ে দুর্বল, খুঁজে বের করুন। এরপর সেগুলোতে সময় দিন। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়—গণিত ও ইংরেজিতে তুলনামূলক বেশি দুর্বল। এমনটি হলে এগুলোর জন্য বাড়তি সময় বরাদ্দ রাখুন। এগুলোর পেছনে সময় দিতে গিয়ে যেন অন্যান্য বিষয় মিস না হয়ে যায়। প্রস্তুতির যে সূচি তৈরি করবেন, তা যেন আপনার দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ হয়। যেমন দেখা গেল প্রতিদিন রাত করে বাসায় আসেন। আর প্রস্তুতির জন্য সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন সন্ধ্যা থেকে। এমন হলে প্রস্তুতির পরিকল্পনা, ছক, সূচি কোনোটাই কাজে আসবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনারত অবস্থায় যাঁরা বিসিএসে প্রস্তুতি নেবেন, তাঁদের উচিত ক্লাস, ক্লাসের পড়া ও পরীক্ষার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতির সূচি ঠিক করা। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও ভবিষ্যতে চাকরির প্রস্তুতি দুটিই সমানতালে চলবে।
বর্তমানে সাধারণ ও টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডারে মোট ২৭টি ক্যাডার রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ‘বিসিএস (তথ্য)’ সাধারণ ক্যাডার। এখানে চাকরি নিশ্চিত হলে কাজ করতে পারবেন স্বনামধন্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও শিক্ষক সমাজের লোকদের সঙ্গে। বাংলাদেশ বেতার শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কাজ করার সুযোগ হবে বাংলাদেশ বেতারসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে। সরকারের উন্নয়নসহ নীতিনির্ধারণী কাজে আপনার অংশগ্রহণের সুযোগ বেড়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে পরিশ্রমের মূল্য বেশি হয়। বুদ্ধিমত্তা বড়জোর নিজেকে প্রস্তুত করার পথ বাতলে দিতে পারে; কিন্তু আসল কাজটাই হলো পরিশ্রমের। কথায় আছে Slow and steady wins the race। মনে রাখবেন, বিসিএস একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সফলতার জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা।
মো. আহসান হাবীব ৩১তম বিসিএস (তথ্য ক্যাডার) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা।
পিবিএ/এফএস